শুক্রবার , ২৯ মার্চ ২০২৪

মেট্রো স্টেশনেই সব সেবা!

  মঙ্গলবার , ১৪ নভেম্বর ২০১৭

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে রাজধানীতে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। এতে ১৬টি স্টেশন থাকবে। এরমধ্যে সাতটিতে থাকবে ঘুমানো থেকে কেনাকাটা পর্যন্ত সব ধরনের সেবা। এসব স্টেশনে বাস, ট্রেন, ট্যাক্সি এবং নৌযানের সঙ্গে সমন্বয় করে মাল্টি মোডাল হাব গড়ে তোলা হবে। এমন মহাপরিকল্পনার কথা জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

হেমায়েতপুর, গাবতলী, মিরপুর-১০, বনানী, ভাটারা, এয়ারপোর্ট ও কমলাপুরসহ সাতটি স্টেশন নিয়ে করা ওই পরিকল্পনায় শপিং মল, গার্মেন্টস, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা চলছে। যেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীরা অনায়াসে তাদের কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেন। থাকবে বাস বে ও সার্ভিস। সেখানে আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ও সিটির বাস থামবে। যাত্রীরা এখানে ওঠানামা করবেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করবেন। তবে এখানে বাস বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারবে না। যাত্রী উঠিয়ে বা নামিয়েই স্থান ত্যাগ করতে হবে।

২০২০ সালে মেট্রোরেল চালুর সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলওয়ে সড়কে ১৬টি স্টেশন থাকবে। স্টেশনে বাস, ট্রেন, ট্যাক্সি এবং নৌযানের সঙ্গে সমন্বয় করে মাল্টি মোডাল হাব তৈরির চিন্তা করেছে সংস্থাটি।

এই প্রকল্পে রাজউক ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), বাংলাদেশ রেলওয়ে (বিআর), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (আইডিসি), কাব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), আরএসডি, ডিইই (বিবিএ), প্রাইভেট ডেভেলপার, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাস মালিক সমিতি ও সেনাবাহিনী সহায়তা করবে।

জানা যায়, কর্মব্যস্ত রাজধানীর নাগরিকদের ভোগান্তি লাঘবের লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ রয়েছে জুলাই ’১২ থেকে জুন ’২৪। ব্যয় হবে ১৬৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫৯ টাকা। রাজধানীর উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মিরপুরের পল্লবী-আগারগাঁও-ফার্মগেট-শাহবাগ-প্রেস ক্লাব হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার রাস্তায় ১৬টি স্টেশন নির্মাণ হবে। ইতোমধ্যে আটটি প্যাকেজের মধ্যে চারটির কাজ চলছে। গত জুন ’১৭ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতির মধ্যে মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রকল্প গঠন, সার্ভে ও ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন, চলছে ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ, ডিপোর ভূমি উন্নয়নকাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪৫ শতাংশ, চলছে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াডাক্ট ও স্টেশন নির্মাণকাজ।

জনবহুল এই রাজধানীতে আছে সচিবালয়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অফিস, মন্ত্রীদের অফিস, বিভিন্ন সরকারি দফতরের হেড অফিস, দূতাবাস, বিদেশি সংস্থার অফিস, বেসরকারি সংস্থার প্রধান কার্যালয়, শপিং মল ছাড়াও আছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিস। এতে করে সারা দেশ থেকে প্রতিদিন মানুষ আসে নানা কাজে, নানা প্রান্তে তাদের যেতে হয়। যানজটের কারণে প্রতিদিন মানুষের হাজারো কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত কোনো কাজে বা শপিং করতে এলে রাতযাপন করার জন্য নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। হোটেল-মোটেল থাকলেও নির্দিষ্ট স্থানে না থাকায় অনেককেই পড়তে হয় বিপাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব সমস্যার সমাধান করতে নেওয়া হয়েছে এমন ধরনের নানা উদ্যোগ। যাতে করে ঢাকায় আসা ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা পেতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নদীপথে যাতায়াতের জন্য নেওয়া হয়েছে নতুন পরিকল্পনা। গাবতলী বাস টার্মিনালটি বুড়িগঙ্গা নদীর কাছাকাছি হওয়ায় নৌপথের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে জলাশয় সংরক্ষণ করে নৌযান চলাচলের উপযোগী করা হবে। সেখান থেকে যেন অনায়াসে যাত্রীরা দেশের বা শহরের যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারেন।

এ ছাড়া টার্মিনালের ভেতর গড়ে উঠানো হবে আবাসিক হোটেল ও মোটেল। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীরা রাত হয়ে গেলে যাপন করতে পারেন। আর অসুস্থ রোগীরা যেন দ্রুতই সেবা নিতে পারেন, সেজন্য নির্মাণ করা হবে হাসপাতাল। আর খাবারের জন্য ফাস্টফুড দোকানসহ থাকবে রেস্টুরেন্ট।

যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। টার্মিনালের দক্ষিণ পাশের জলাধরও সংরক্ষণ হবে। এতে করে উন্নত নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া স্টেশনগুলোতে ভূগর্ভস্থ পার্কিং ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কার্যালয়, কমিউনিটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ, শিল্প-কারখানা ও ফাঁকা জায়গা রাখা হবে। স্টেশন প্লাজা নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

রাজউক কর্মকর্তারা জানান, গাবতলী বাস টার্মিনাল দিয়ে শুরু করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সার্ভে করার কাজ শেষ হয়েছে। এখন বাজেট এলে প্রকল্প পরিচালক নির্ধারণ করা হবে। তবে সব মিলিয়ে কাজ শুরু করতে বছরখানেক সময় লাগবে বলেও জানান কর্মকর্তারা। গাবতলীর পর কমলাপুর ও মিরপুর-১০ স্টেশন সাজানো হবে। এরপর ক্রমান্বয়ে হেমায়েতপুর, এয়ারপোর্ট, বাটারা, বনানী স্টেশন এলাকায় এ ধরনের উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে রাজউকের। এসব প্রকল্প রাজউকের আওতাধীন ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) টিওডি-এর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও পলিসি নির্ধারণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে নতুন ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, নাগরিক সেবা বাড়াতে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো করে আমরাও মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান থাকবে; যাতে করে স্টেশনে নেমে যাত্রীরা নির্বিঘেœ তাদের গন্তেব্য পৌঁছতে পারেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্টেশন এলাকার জমিগুলোর ব্যবহার ও মান বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে নাগরিকরা সর্বোচ্চ সেবা পাবে।

গাবতলী স্টেশনে বাণিজ্যিক সুবিধা থাকবে, বাস ডিপো এবং টার্মিনালকে আধুনিক টার্মিনাল হিসেবে গড়ে তোলা হবে ও জলাশয় এলাকা উন্নয়ন করা হবে। মিরপুর স্টেশনে ইন্টারমোডাল সুবিধা থাকবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিআরটিএ, এমআরটি ও এয়ারপোর্টের সঙ্গে সমন্বয় করে যাতায়াত ব্যবস্থা ও ইন্টিগ্রেশনসহ বাণিজ্যিক এলাকায় উন্নয়ন করা হবে এয়ারপোর্ট স্টেশনে।

কমলাপুর স্টেশনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে স্টেশন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাকে নিয়ে রাজউক নতুন পরিকল্পনা থাকবে। এ ছাড়া রেলওয়ের লাইন এক এবং ছয়ের জন্য আন্তসংযোগ যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পের জন্য রাজউক জমি অধিগ্রহণ করবে।

পূর্বাচল নিউ টাউন এলাকা স্টেশন এলাকায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা উন্নয়নে সুবিধা নিশ্চিত করা হবে, খালি জায়গাগুলো বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী করা হবে, কম মূল্যে হাউজিং ব্যবস্থা করা হবে ও রাজউক জমি অধিগ্রহণের জন্য সহযোগিতা করবে।

হেমায়েতপুর স্টেশন এলাকা নতুন করে সংস্কার করা হবে। যাতায়াতের জন্য সাভার পর্যন্ত সড়ক বাড়ানো হবে। নতুন বাজার স্টেশনে আন্তযোগাযোগ সমন্বয়ের সুবিধা থাকবে। আর ভাটারা স্টেশন এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়ন করা হবে। বিআরটি সেবাকে পশ্চিম দিকে বাড়ানো হবে। এ ছাড়া সব স্টেশনে ৫০০-১০০০ মিটারের মধ্যে যাত্রীরা নির্বিঘেœ প্রবেশ ও হাঁটতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা হবে।

গণপরিবহনের সুবিধা, ভূগর্ভে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, যাত্রীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারা, যানজট নিরসন করা, আশপাশের জায়গার মান বাড়ানো। এ প্রকল্পের সাফল্যের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ‘মেট্রোরেল স্টেশন নিয়ে আমাদের বড় ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আগে স্টেশনগুলো হোক, পরে ডিএসসিসি, ডিএনসিসিসহ অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে সবগুলো স্টেশন না হলেও সাতটি স্টেশনে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।’

এ ছাড়া নাগরিক সেবা বাড়াতে অন্য সেবাগুলোও থাকবে স্টেশনগুলোয়। এটি সফল হলে বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনার পরিসরে তা এক নতুনমাত্রা যোগ করবে।

 সারাবাংলা থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ