মঙ্গলবার , ২৩ এপ্রিল ২০২৪

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : শারীরিক প্রতিবন্ধী মিনারা খাতুন জন্মের কিছুদিন পর হারায় মাকে এরপর বাবা বিয়ে করেন তার খালাকে। অভাবের সংসার শুধু নেই আর নেই।

নানান বাঁধা এর পরও নেই তার দু’হাতের আঙ্গুল তবুও প্রবল ইচ্ছাশক্তির বলে এবারের জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে কুড়িগ্রামের চিলমারীর অদম্য শারীরিক প্রতিবন্ধী মিনারা খাতুন।

তার ইচ্ছা মানুষের মতো মানুষ হয়ে জনগণের সেবা করার। মিনারা খাতুন কাঁচকোল দক্ষিণ বাঁধ এলাকার দিনমজুর রফিকুল ইসলাম ও মৃত-মর্জিনা বেগমের মেয়ে মিনার কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধকতা। দুই বোনের মধ্যে মিনারা ছোট।

জানা গেছে, জন্ম থেকেই তার ২ হাতের কব্জি বাঁকা,নেই আঙ্গুল তবুও থেমে যায়নি মিনারা। এবারে জেডিসি পরীক্ষা অংশ নিয়ে দু’হাতের কব্জিতে কলম চেপে ধরে সমানে লিখে চলেছে উত্তর।

মিনারার দুই দুই হাতের কব্জির সাহায্যে লিখেই একে একে ৫ম শ্রেণীর সমাপনী (পিএসসি) পাস করে সে এবার জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। সে উপজেলার কাঁচকোল খামার সখিনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী।

নানা বাধার মধ্যে থেমে না গিয়ে দুই হাতের কব্জির সাহায্যে কলম ধরে সে লেখা-পড়া চালিয়ে আসছে। এভাবে কব্জির সাহায্যে সে সাংসারিক বিভিন্ন কাজে বাবা ও সৎ মাকে সহায়তা করেছে।

ছোট বেলা থেকেই তার পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে বাবা মা তাকে স্থানীয় কেডি ওয়ারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। মিনারা পড়তে পারলেও লিখতে পারেনি। তারপরও সে মনবল হারায়নি।

অদম্য সাহসের সঙ্গে বড় বোন কনার সহায়তায় বাড়ীতে বসে বসে দুই হাতের কব্জির সাহায্যে কলম জড়িয়ে ধরে লিখতে শুরু করে মিনারা।

যেদিন সে বর্ণ লেখা শেখে, সেদিনই তার বেশী আনন্দ লেগেছিল বলে জানায় মিনারা। স্কুলের শিক্ষকগণ অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের মতই যত্ন সহকারে তাকে লেখা-পড়া শেখাতে থাকেন।

এভাবেই পিএসসি পাস করে সে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। সমাজসেবা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা থেকে সে উপবৃত্তি পায় তা দিয়ে চলে তার লেখা-পড়ার খরচ।

কাঁচকোল খামার সখিনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আইয়ুব আলী আকন্দ জানান, মিনারা ছাত্রী হিসেবে ভালো। মাদ্রাসায় লেখা-পড়ার সকল প্রকার দায়িত্ব আমরা নিয়েছি।

রাজারভিটা ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা জেডিসি কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, দুই হাতের সাহায্যে লিখে মিনারা ভাল পরীক্ষা দিচ্ছে, তাকে আমরা অতিরিক্ত সময় দিচ্ছি। মেয়েটি ফলাফল ভাল করবে বলে আমার ধারনা। সকলের সহযোগীতা পেলে সে একদিন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে। ভবিষ্যতে হয়তো কারো বোঝা হতে হবে না।

মিনারা খাতুন জানায়, সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন বড় হতে পারি এবং মানুষের সাহায্য করতেও পারি।

 শিক্ষাঙ্গন থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ