শুক্রবার , ২৯ মার্চ ২০২৪

রেমিটেন্স বিনিয়োগে আনতে ‘সঞ্চয় স্কিম’ চালুর সুযোগ

দেশকাল অনলাইন   সোমবার , ১০ আগষ্ট ২০২০

প্রবাসীদের পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থের একটি অংশ দেশের উৎপাদনশীল খাতে আনতে একটি উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘সঞ্চয় স্কিম’ চালুর সুযোগ করে দিয়ে প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ নেওয়া হল।

এখন থেকে ব্যাংকগুলোতে মাসিক কিংবা ত্রৈমাসিক কিস্তিভিত্তিক এই সঞ্চয় স্ক্রিম খুলতে পারবেন প্রবাসীরা। সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদ এক বছর বা তার বেশি হতে পারবে। এই সঞ্চয় স্কিমের স্থিতি জামানত রেখে ঋণ নেওয়ারও সুযোগ পাবেন প্রবাসীরা। বিশেষ প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি সাপেক্ষে জমানো টাকা বিদেশেও নেওয়া যাবে।

রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সার্কুলারে দেশে বসবাসকারী স্থায়ী বাসিন্দাদের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও ব্যাংকগুলোতে মাসিক বা ত্রৈমাসিক কিস্তিভিত্তিক সঞ্চয় স্কিম চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বৈধ চ্যানেলে পাঠানো অর্থের বিপরীতে এ ধরনের হিসাব খোলা যাবে।

বর্তমানে প্রবাসীদের জন্য তিন ধরনের সঞ্চয় বন্ড বা প্রবাসী বন্ড চালু রয়েছে। এগুলোতে কেবল বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। এখন স্থানীয় মুদ্রা টাকায়ও বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগে আনতে এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রবাসীরা দেশে আরও বেশি রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত হবেন।

তিনি বলেন, “অনেক দিন ধরেই এমন একটা উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রবাসীরা অনেক কষ্ট করে কাজ করে যে অর্থ বা রেমিটেন্স দেশে পাঠান তার সিংহভাগ অর্থই ভোগবিলাসে ব্যয় হয়ে যায়। যে পরিবার-পরিজনের নামে টাকা পাঠান, তারা টাকাটা তুলে জমি কিনে, ভালো ভালো খেয়ে অথবা বাড়িঘর বিল্ডিং করেই ব্যয় করে ফেলেন।

“এমনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, যার নামে টাকা পাঠানো হয়েছে, তিনি সেই টাকা দিয়ে নিজের নামে সব কিছু করেছেন। প্রবাসী দেশে ফিরে দেখেন তার নামে কিছুই নেই। পরে তাকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে।” ছোট ছোট রেমিটারদের পাঠানো অর্থ যাতে এমন অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ না হয়ে উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হয়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ বলে জানান হুমায়ুন।

“প্রবাসীদের জন্য যে তিন ধরনের বন্ড চালু আছে, তাতে যারা বেশি রেমিটেন্স পাঠান তারাই বিনিয়োগ করে থাকেন। যারা অল্প রেমিটেন্স পাঠান তারা বিনিয়োগ করেন না। এই ছোট রেমিটারদের জন্যই নতুন এই উদ্যোগ।”

উদাহরণ দিয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, “ধরা যাক, একজন প্রবাসী সৌদি আরব থেকে মাসে প্রতি মাসে ২৫০ ডলার দেশে পাঠান। সেখান থেকে ২০০ ডলার যার নামে পাঠিয়েছেন তিনি তুলে পরিবারের প্রয়োজনে খরচ করল। বাকি ৫০ ডলারের সমপরিমাণ টাকা সঞ্চয়ী হিসেবে প্রবাসীর অ্যাকাউন্টে জমা থাকল। সেই সঞ্চয় থেকে তিনি মাসে মাসে মুনাফা বা সুদও পাবেন। গ্রাহকরা ব্যাংকে যেমন ডিপিএস খোলেন, ঠিক সেরকম।”

“এতে ব্যাংকগুলোরও একটা সুবিধা হবে, তাদের ডলারের সরবরাহ বাড়বে,” বলেন তিনি। প্রবাসীদের এই আমানত বা সঞ্চয়ের সুদের হার কত হবে- জানতে চাইলে হুমায়ুন বলেন, “এটা ব্যাংকগুলো নির্ধারণ করবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে, এই সঞ্চয় স্কিমের সুদের হার যেন অবশ্যই অন্য আমানতের সুদের হারের চেয়ে বেশি হয়।”

সার্কুলারে বলা হয়েছে, এক বছর বা তার বেশি মেয়াদে প্রবাসীদের জন্য সঞ্চয় স্কিম খুলতে পারবে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলো। বিদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে সরাসরি পাঠানো অর্থ, এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে পাঠানো রেমিটেন্স নগদায়ন বা প্রবাসীরা দেশে বেড়াতে আসার সময় সঙ্গে আনা বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে হিসাব খুলতে পারবেন।

প্রবাসীর নামে পরিচালিত বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবের স্থিতি নগদায়নের মাধ্যমেও সঞ্চয় স্কিমে অর্থ জমা করা যাবে। বিদেশে যাওয়ার আগেই কোনো ধরনের জমা ছাড়াই এ ধরনের হিসাব খোলা যাবে। এতে আরও বলা হয়েছে, প্রবাসীদের সঞ্চয়ী হিসাবের প্রোডাক্ট প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর তা গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদ পূর্তিতে অনিবাসী হিসাবধারীর মনোনীত ব্যক্তিকে ব্যাংক জমাকৃত অর্থ সুদসহ দিতে পারবে। আবার বিকল্প ব্যবস্থায় ওই স্থিতি দিয়ে প্রবাসী ব্যক্তি নতুন করে তার নামে স্থায়ী আমানত হিসাব খুলতে পারবেন। বিদেশে থাকা অবস্থায় উপযুক্ত কারণে অর্থের প্রয়োজন হলে আবেদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় অর্থ বিদেশে পাঠানোর বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংক বিবেচনা করবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “এটা খুবই একটা ভালো উদ্যোগ। অনেক আগেই এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ ছিল।” গত ২৩ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে লেখা এক চিঠিতে প্রবাসীদের জন্য জরুরিভিত্তিতে এমন উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে মার্চে কিছুটা হোঁচট খেলেও এরপর থেকে দেশের প্রবাসী আয়ে চলছে ঊর্ধ্বমুখী ধারা। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেকর্ডের পর কোরবানির ঈদ ঘিরে জুলাইয়ে রেমিটেন্স নিয়ে প্রত্যাশাও ছাপিয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাইয়ে দেশে ২৬০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে, যা এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

আর গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

 অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ