কোনো হিন্দু নারীর, বিশেষত কোনো নিম্নবর্ণের দলিত নারীর, পাকিস্তানের সিনেট সদস্য হবার মতো ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। কিন্তু দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসে এবার সেই নজিরই সৃষ্টি হয়েছে।
পাকিস্তানী গণমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়, কৃষ্ণা কুমারী নামের এই হিন্দু নারী সিন্ধু প্রদেশের থর জেলার নগরপারকার শহরের প্রত্যন্ত এলাকা ধানা গ্রামের কোহলি সম্প্রদায়ের। তিনি পাকিস্তানের সিনেটে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত হয়েছেন।
বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) কুমারী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি কল্পনাও করিনি আমি সিনেটের সদস্য হতে পারবো।’
নবনির্বাচিত এই সিনেট সদস্য বলেন, ‘আমি নিপীড়িত মানুষদের জন্য কাজ করে যাবো। বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার জন্য কাজ করবো।’
কৃষ্ণা কুমারী ১৯৭৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার তিনবছর উমেরকোট জেলার ভূস্বামী কুনরির ব্যক্তিগত জেলখানায় বন্দিজীবন কাটান। পরে পুলিশের এক অভিযানে তাদের মুক্ত করা হয়।
উমেরকটের তালহি গ্রামে তিনি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি মিরপুরখাস জেলার তানদো কলাচি এলাকায় পড়াশোনা করেন। অনেক সংকটের মধ্যে বাবা-মা কৃষ্ণা ও তাঁর ভাইয়ের লেখাপড়া চালিয়ে নেন।
কিন্তু ১৯৯৪ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তার বিয়ে হয়। সে সময় ক্লাস নাইনে পড়তেন তিনি। যদিও ভাগ্যক্রমে বিয়ের পরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। ২০১৩ সালে সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। এই সময় থেকেই রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। সেসময় তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টির হয়ে সমাজকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
কৃষ্ণা তাঁর এই সফলতা মা-বাবাকে উৎসর্গ করে জানান, শিক্ষা গ্রহণে বাবা-মাই তাঁকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। তাঁদের কারণে তিনি পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীর যোদ্ধা রুপলো কোহলির পরিবারের সদস্য কৃষ্ণার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির থার অঞ্চলের এমপি মহেশ কুমার মালানি। নির্বাচনের আগে ডনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই আশাবাদের কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
জানা যায়, রুপলো কোহলি ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ বাহিনীর ওপর আক্রমণের কারণে নগরপার্কারে গ্রেপ্তার হন এবং ১৮৫৮ সালের ২২ আগস্ট তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়।