শুক্রবার , ২৯ মার্চ ২০২৪

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত ২৮ মে থেকে শুরু হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লেবার কনফারেন্স বা আইএলসি। এই কনফারেন্সে বিশ্বব্যাপী শ্রম পরিস্থিতি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সদস্য দেশের জন্য পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। এবারের আইএলসিতে বাংলাদেশের শ্রম আইনের ইস্যুটি জোরালোভাবে আলোচনায় আসবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) উদ্যোগে শুরু হওয়া এ কনফারেন্স শেষ হবে ১২ জুন।
গত বছরের আইএলসিতে শ্রম আইনের কিছু ইস্যুতে পরিবর্তন ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) আইনের বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এ বছরের আইএলসি’র ঠিক আগে শ্রম মন্ত্রণালয় শ্রম আইনের কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনের প্রস্তাব এনেছে। প্রস্তাবিত ওই সংশোধনী এবার আইএলসিতে তুলে ধরে বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়টি জানানো হবে।
গত বছর শ্রম আইনের পরিবর্তনের বিষয়ে আইএলসি’র পর্যবেক্ষণ ছিল। এর মধ্যে কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যা বিদ্যমান ৩০ শতাংশ থেকে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা, অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম ট্রেড ইউনিয়নবান্ধব করা, ট্রেড ইউনিয়ন বিরোধী কর্মকান্ড রোধে ব্যবস্থা নেওয়া, একই শ্রম আইন ইপিজেডের জন্য প্রয়োগ এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) কর্মকর্তাদের ইপিজেডে পরিদর্শনের ক্ষমতা দেওয়া ও সেখানে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকারের কথা বলা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এবারের আইএলসিতে এ ইস্যুগুলো নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। এসব ক্ষেত্রে কী ধরণের অগ্রগতি হয়েছে কিংবা অগ্রগতি না হলে কেন হয়নি তাও আলোচনায় আসবে। ইতোমধ্যে সরকার, কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের একটি অংশ জেনেভায় উপস্থিত হয়েছেন। বাংলাদেশের ইস্যুটি আগামী মাসের শুরু নাগাদ আলোচনায় আসতে পারে বলে জানা গেছে। আইনমন্ত্রী এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীও বাংলাদেশ অংশের আলোচনায় উপস্থিত হতে পরেন।
সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের আইএলসি’র পর থেকেই শ্রম আইনের পরিবর্তনের লক্ষ্যে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও এক বছরেও তা সংশোধন করা যায়নি। সর্বশেষ তড়িঘড়ি করে গত সপ্তাহে শ্রম মন্ত্রণালয় সংশোধনীর একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। ওই প্রস্তাবটিই আইএলসিতে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়াকে সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যে কোন কারখানার ২০ শতাংশ শ্রমিক চাইলেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। এছাড় ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের প্রক্রিয়াকেও সহজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে এটি করা যেত। অন্যদিকে শ্রম সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে ১৮০ দিন বা ছয় মাসের বাধ্যবাধকতার কথাও রয়েছে এতে। এছাড়া ইপিজেডেও ট্রেড ইউনিয়নের আদলে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠন করা যাবে। আগে এ জন্য ৫০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক থাকলেও এবার তাও ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্যদিকে সেখানে ট্রেড ইউনিয়নের জন্য আরো কিছু প্রক্রিয়াগত বাধাও তুলে দেওয়া হচ্ছে। ডিআইএফই’র কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের ক্ষমতাও দেওয়া হচ্ছে সেখানে।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, এবার শ্রম আইন সংশোধনের যে প্রস্তাব আনা হয়েছে, তাতে আইএলসিতে আমাদের বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসবে বলে আশা করছি। গত বছরের আইএলসি’র পর্যবেক্ষণকে গুরুত্ব দিয়েই এবারের সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।
অবশ্য শ্রম আইনের সংশোধনীর কিছু বিষয়ে শ্রমিকদের আপত্তি রয়েছে। এছাড়া এতদিনেও আইনটির সংশোধন করতে না পারায় তাদের মধ্যে অসন্তোষও রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) মহাসচিব তৌহিদুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, এবারের প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিষয়ে আইএলসি’র পর্যবেক্ষণ ইতিবাচক হলে সংশোধনী পাশ করতে ফের এক বছর লেগে যেতে পারে। অবশ্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ইত্তেফাককে বলেন, প্রস্তাবিত সংশোধনী শিগগিরই মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উঠবে। আর আগামী সংসদের বাজেট অধিবেশনেই পাশ করার জন্য সংসদে উঠানোর প্রস্তুতি রয়েছে।

  রাজনীতি থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ