বৃহস্পতিবার , ২৮ মার্চ ২০২৪

১৪ বছরে গ্রেফতার ৭২ হাজার

  শনিবার , ০২ জুন e ২০১৮

১৪ বছরে মাদকবিরোধ অভিযানে র্যাব ৭১৯২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। মামলা হয়েছে ৩৭১৬১টি। মাদকসহ এসকল আসামির স্থানীয় পুলিশের কাছে তা হস্তান্তর করে র্যাব। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এসব মামলার অধিকাংশেরই বিচার হয়নি। কোন মামলার চার্জশিট হলেও নেপথ্যে আসামিদের পক্ষে ফাঁক-ফোকড় থেকে যায়। ইয়াবাসহ প্রকৃত মাদক উদ্ধার করা হয়। সেই মাদক আসামিসহ পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই উদ্ধারকৃত মাদক পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে প্রেরণ করা হয়। বেশিরভাগ মাদকের রিপোর্ট আসে যে, ভিতরে আছে আটা-ময়দা। এগুলো আসল মাদক নয়। অর্থাত্ প্রকৃত মাদক পরীক্ষার পর হয়ে যায় আটা-ময়দা। দুর্বল চার্জিশিট এবং প্রকৃত ইয়াবা আটা-ময়দা করার পেছনে জড়িত এক শ্রেণির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কোটি কোটির উেকাচ দিয়ে থাকে মাদক ব্যবসায়ীরা। এ কারণে পরীক্ষায় প্রকৃত মাদক হয়ে যায় আটা ময়দা। আর আসামিরা আদালতে আইনের ফাঁক-ফোকড় ও তথ্য প্রমাণের অভাবে পেয়ে যায়, কেউ সহজে জামিন পেয়ে বের হয়ে যায়। বের হয়ে এসেই তারা পুনরায় জোরেশোরে মাদক ব্যবসা শুরু করে। সরষের মধ্যের ভূতকে শনাক্ত না করা পর্যন্ত মাদক ব্যবসায়ীরা ধরাছোয়ার বাইরে থেকেই যাবে। পুলিশ ও র্যাবের অধিকাংশ কর্মকর্তা এ সত্যতা স্বীকার করেছেন। বেশিরভাগ আসামি জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঠে র্যাবের সঙ্গে এসব আসামিদের প্রায়ই দেখা হয়। তখন তারা বলে জামিনে আছেন। এমন ঘটনাগুলো র্যাবের কাছে স্বপ্ন ভাঙার মতো মনে হয়।
কাউকে গ্রেফতার করতে হলে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। অথচ সেই গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি যখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপর অংশের অবহেলায় ছাড়া পায় তাহলে গ্রেফতারের দরকার কী? জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে র্যাব-পুলিশের কাজে সমন্বয়ের অভাব দেখা যাচ্ছে। এই সুযোগও নিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেফতারকৃত অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ী সহজে ছাড়া পেয়ে যায় এবং পুনরায় তারা মাদক ব্যবসা করছে। কেউ কেউ বলে স্যার আমাদের গ্রেফতার করে রাখতে পারবেন না। সব জায়গায় আমাদের লোক আছে। আমাদের টাকায় সবাই কথা বলে।
এদিকে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, অনেক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হয়। পরে বের হয়ে এসে পুনরায় যখন তাদের মাদক ব্যবসা করতে শুনি, তখন সত্যি খারাপ লাগে। যাদের এত কষ্ট করে গ্রেফতার করা হলো, তারা আবার সেই ব্যবসায় ফিরে আসছে। এটা যেন স্বপ্ন ভাঙার মতো কাহিনী। এতে করে সাধারণ মানুষের কাছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। লোকজন বলাবলি করে টাকার কাছে সবাই বিক্রি হয়ে যায়। র্যাব কোন অবস্থাতে মাদক নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত পিছু হটবে না। এ সর্বনাশা মাদক নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে। জঙ্গি নির্মুলে র্যাব যেমন সফল হয়েছে, তেমনিভাবে মাদকও নির্মুলে আমরা জনগণের সহায়তা সফল হবো বলে র্যাবের মহাপরিচালক আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
২০০৩ সালের দিকে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটে। আর এর আগের সরকারের সময় থেকে চলমান জঙ্গিবাদী কার্যক্রমও জোরদার হয়। সে পর্যায়ে ২০০৩ সালে অপারেশন ক্লিনহার্ট নামের সামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি অভিযানে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। অভিযান পরিচালনা কার্যক্রম শেষে একটি দায়মুক্তি আইনও করা হয়। পরিস্থিতি আবার অবনতিশীল হলে ২০০৪ সালে ২৪ মার্চ গঠন করা হয় র?্যাব। তাদের দেওয়া হয় মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার, সশস্ত্র অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহেরও দায়িত্ব। তখন থেকে র্যাব মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে আসছে। ২০০৪ সালে র্যাব মাদক বিরোধী অভিযানকালে ৩০৯ জনকে গ্রেফতার করে, মামলা করে ২০৪টি। ২০০৫ সালে ১৩২৬ জন গ্রেফতার হয়, মামলা দায়ের হয় ৭৮৩টি। ২০০৬ সালে ২৩৩৬ জন গ্রেফতার, মামলা ১৩১৩টি; ২০০৭ সালে ৩৫৬০ জন গ্রেফতার, মামলা ১৯৮১টি; ২০০৮ সালে ৪৭৭৮ জন গ্রেফতার, মামলা ৩৬৭৩টি, ২০০৯ সালে গ্রেফতার ৫৭১৪ জন, মামলা ৩৪৫০টি; ২০১০ সালে গ্রেফতার ৭০২৮ জন, মামলা ৪৩০৬টি; ২০১১ সালে ৯৪৮৬ জন গ্রেফতার, মামলা ৪৮২৩টি; ২০১২ সালে ৭৮৬০ জন গ্রেফতার, মামলা ৩২৯৭টি; ২০১৩ সালে ৫১৮৩ জন গ্রেফতার, মামলা ২৬৯৩টি; ২০১৪ সালে গ্রেফতার ৪২৮৩ জন, মামলা ২৪৪৫টি; ২০১৫ সালে গ্রেফতার ৬২৮২ জন, মামলা ৩৪৪৭টি; ২০১৬ সালে গ্রেফতার ৪৫০১ জন, মামলা ২৩৫৩টি; ২০১৭ সালে গ্রেফতার ৪০৬০ জন, মামলা ১৭২০টি এবং ২০১৮ সালের এ পর্যন্ত র্যাব ৫২২২ জনকে গ্রেফতার এবং ৬৭৩টি মামলা করেছে।

 সারাবাংলা থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ