বৃহস্পতিবার , ২৮ মার্চ ২০২৪

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই পদের প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রণয়ন করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ প্রত্যাশী ৩২৩ জনের পারিবারিক পরিচয়সহ জীবনবৃত্তান্ত এবং সাংগঠনিক ও গোয়েন্দা সংস্থার ৫ স্তরের রিপোর্ট যাচাই বাছাইয়ের পর তিনি এ তালিকা প্রণয়ন করেছেন।

আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গণভবনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ৩২৩ জনের সঙ্গে কথা বলে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করবেন শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্র ইত্তেফাককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, শুধু কেন্দ্রে নয়, সারাদেশের ছাত্রলীগে নতুন নেতৃত্ব আনবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কেন্দ্রের পাশাপাশি সারাদেশের সব জেলা কমিটির বিষয়েও খোঁজ নিয়েছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগরের দুই অংশ ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির আংশিক কমিটি করে দিতে পারেন তিনি নিজেই। এছাড়া ঢাকা ও এর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটেও যোগ্য ও দক্ষ ছাত্রনেতাদের নাম দিয়ে দিতে পারেন নতুন নির্বাচিত সভাপতি-সম্পাদকের কাছে। তারা পরবর্তীতে এসব ইউনিটে কমিটি গঠন করবেন। মেয়াদপূর্তি না হলেও সাংগঠনিক গুরুত্ব বিবেচনায় অনেক জেলায় আসতে পারে নতুন কমিটি। 

প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ মে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১১ মে বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন উদ্বোধন করেন। পরদিন  কাউন্সিল অধিবেশনে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষমতা ছাত্রলীগের অভিভাবক শেখ হাসিনার ওপর অর্পন করা হয়। এবার ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগেই সংগঠনে বাহিরাগতদের অনুপ্রবেশ নিয়ে আলোচনা হয়। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটিতে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, পাক বাহিনীর সহায়তায় গঠিত শান্তি কমিটির কর্মকর্তাদের সন্তান-স্বজনদের নেতৃত্বে বসানোর অভিযোগ ওঠে। ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সময়ে দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে সমালোচিত হয় দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনটি। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও বলা হয়েছিল, ছাত্রলীগের মধ্যে তারেক রহমানের এজেন্ট ঢুকেছে। এই সব সমালোচনা এবং অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, এবার কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে হবে না, সমঝোতার মাধ্যমে হবে। এর প্রধান কারণ ছিল, ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে নির্বাচনের সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট ভাঙতেই প্রধানমন্ত্রী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সমাঝোতায় বসার নির্দেশ দেন। কিন্তু সমঝোতা না হওয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচন করতে কাউন্সিলরা শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব দেন।

প্রতি বছরই ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগে প্রাক্তন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা কমিটি করার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখেন। যে কমিটি হয়, সেটি হয় তাদের পকেট কমিটি। প্রাক্তন ছাত্রনেতাদের হাতিয়ার হয় ছাত্রলীগ। তাদের কারণেই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে। 
সম্মেলন শেষ হবার পর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব লাভে ইচ্ছুকদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ টিম থেকে তথ্য সংগ্রহ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ ৬টি উত্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগ নিয়ে গা শিউরে ওঠা তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে। ছাত্রলীগকে পরিকল্পিতভাবে জঙ্গি সংগঠনে পরিণত করার টার্গেট ছিল অনুপ্রবেশকারীদের। ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদের পাশাপাশি সারাদেশের বিভিন্ন জেলা ইউনিটে শিবির, ছাত্রদল, একাত্তরের পাক বাহিনীর সহায়তায় গঠিত শান্তি কমিটির সন্তান-স্বজনসহ স্বাধীনতাবিরোধী মতাদর্শের ছাত্রদের ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে আলোচনাকালে বলেছেন, ‘ছাত্রলীগকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে সেটা হতে দেবো না।’ এবার ছাত্রলীগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শীর্ষ এ দুই পদের জন্য ৩২৩ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর আগে কখনও এত বেশি সংখ্যক ছাত্রনেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি, এটি রেকর্ড। এর মধ্যে সভাপতি পদে ১১১ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ২১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি ধানমন্ডি দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সংগঠনের কমিটি যাতে ভালো হয় এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিভিন্ন খোঁজখবর সংগ্রহ করছেন।’ দেরি হলেও ছাত্রলীগের ভালো কমিটি আসবে। সবাই প্রশংসা করার মতো কমিটি আসবে।’

 জাতীয় থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ