শনিবার , ২৭ এপ্রিল ২০২৪

চঞ্চল দাশগুপ্ত, কক্সবাজার:
কক্সবাজারে গত ৩ দিনের ভারি বর্ষণের কারনে পাহাড় ধসে একই পরিবারের চার শিশুসহ মোট পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।বুধবার ভোরে কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রূমালিয়ার ছড়া এবং রামু উপজেলার মিঠাছড়ি এলাকায় পৃথক দুর্ঘটনায় এই প্রাণহানি হয়েছে।এছাড়া শহরে দেয়াল চাপা পড়ে এক যুবকের মৃত্যূর খবর পাওয়া গেছে এবং বুধবার দুপুরে রামুর লম্বরীপাড়া এলাকায় বাঁকখালী নদীতে ভেসে আসে অজ্ঞাত যুবকের মৃতদেহ। স্থানীয়রা মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করলেও তাৎক্ষনিক ওই যুবকের পরিচয় মেলেনি।এনিয়ে কক্সবাজারে একদিনে ৭ জনের মৃত্যূ হল। 
জানা যায়,কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রূমালিয়ার ছড়া বাঁচামিয়ার ঘোনা এলাকায় বুধবার ভোরে পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৪ শিশু মারা গেছে। ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ের একটি অংশ ওই এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী জামাল হোসেনের বাড়ির উপর ধসে পড়ে। এতে ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা ৪শিশু চাপা পড়ে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে মাটির নিচে চাপা পড়া শিশুদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় নিহতরা হলো-জামাল হোসেন এর কন্যা মর্জিয়া আকতার (১৬), কাফিয়া আকতার (১০), খাইরুন্নেছা (৬) এবং পুত্র আবদুল খাইর (৮)। নিহতদের মা ছেনুয়ারা বেগমকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। 
নিহতদের মামা খোরশেদ আলম জানান-ভোর ৬ টার দিকে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের বড় একটি অংশ ধসে পড়ে বাড়ির উপর। এই সময়ে তাদের মা বাড়ির উঠানে কাজ করছিলেন। তার চিৎকার শুনে এলাকার লোকজন এগিয়ে আসে। মসজিদের মাইকেও ঘোষণা দেওয়া হয়। লোকজন এগিয়ে এসে দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। মাটির নিচ থেকে ৪ শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। তাদের মা ছেনুয়ারা বেগমকে মুমূর্ষু অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 
এদিকে রামু উপজেলার মিঠাছড়ি ইউনিয়নের পেচাঁরঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে মোর্সেদ আলম (২) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। সে ওই এলাকার জাফর আলমের পুত্র। বুধবার ভোরে পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়ে বাড়ির উপর। এতে চাপা পড়ে পরিবারের ৩ সদস্য। তাদেরকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত ২ জনকে হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 
গত ৩ দিন ধরে কক্সবাজার জেলায় ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এতে ব্যাপক হারে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আরো প্রাণহানির আশঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরতদের স্থানীয় প্রশাসন জেলার বিভিন্ন স্থানে সতর্ক সংকেত জারি করে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরতদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছে। 
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক কাজি আবদুর রহমান জানান, কক্সবাজার জেলা সদর সহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে স্থান দিয়ে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী ও খাবার দেওয়া হচ্ছে। 
তিনি আরও জানান, উখিয়া ও টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্বে অভিযান চলছে। মাইকিং করার পরও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত যারা নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে না তাদেরকে প্রশাসনের উদ্যোগে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের অফিসে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।এদিকে তিন দিনের টানা ভারী বর্ষনে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির নিম্ম এলাকায় পাহাড়ী ঢলে প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।অতি বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বুধবার দিনভর দুই উপজেলার নিম্ম এলাকায় অন্তত শতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু-দৌছড়ি সড়ক, বাইশারী-গর্জনীয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের তিন জায়গায় ব্যাপক ভাঙ্গনে গাড়ী যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। 

 উপসম্পাদকীয় থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ