শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নবীনগর পৌরসভায় ভোট চলছে ভোটারের ঢল

  সোমবার , ১৪ অক্টোবর ২০১৯

আশীষ সাহা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌরসভার নির্বাচনে ভোট গ্রহন চলছে। সকাল নয়টা থেকে ১১ নাগাদ পাঁচটি কেন্দ্রে ভোটারের ঢল লক্ষ্য করা গেছে। তবে একাধিক কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে সমস্যা দেখা দেয়ায় বিপত্তি দেখা দেয়। নবীনগর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কথা হয় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরিফুল আমীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'গত ১০ বছরেও আমি এমন উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হতে দেখিনি। সকাল থেকেই ভোটারের বেশ উপস্থিতি।' নির্বাহী রাজকুমার বিশ্বাস বলেন, 'ইভিএম এ আগ্রহ থাকায় ভোটার উপস্থিতি খুব বেশি'। ভোটের নম্বর নিয়ে ভোটারের অসচেতনতার কারণে ভোট গ্রহন দেরি হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।  আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র জন্য আজকের ভোট মর্যাদার লড়াই হিসেবে উপনীত হয়েছে। যদিও বড় এই দুই রাজনৈতিক দলেই নানা ধরণের সমস্যা রয়েছে।সম্প্রতি হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ হারানোর পর পৌরসভার মেয়র পদটি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপি’র জন্য। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো মেয়র পদটি বাগিয়ে নেয়ার হাতছানি আওয়ামী লীগের সামনে।তবে সার্বিক বিবেচনায় অনেকটাই এগিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। বর্তমান ও সাবেক দুই এম.পির পূর্ণ সমর্থন থাকা এগিয়ে রেখেছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শিব শংকর দাসকে। একই সঙ্গে বিএনপি ঘরনার ফারুক আহমেদও শেষ মুহুর্তে এসে শিব শংকরকে সমর্থন দেয়ায় এগিয়ে থাকাটাকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করলো। দলের প্রার্থীর বাইরেও বিএনপিতে আরো দুইজন ‘শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী’ লড়ছেন মেয়র পদে, যা পিছিয়ে রেখেছে বিএনপিকে। এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল আচরণবিধি লংঘন করে দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করার অভিযোগ এনে অন্য প্রার্থীরা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যদিও সংসদ সদস্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।    পৌর নির্বাচনে মোট ৩৬ হাজার ৩৬৪ ভোটার এবার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ পৌরসভার এটা দ্বিতীয় নির্বাচন। মেয়র পদে জন ১১ জন, কাউন্সিলর পদে ৬৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৪ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে হিন্দু ধর্মালম্বীদের অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগত অনুদান দেয়া ঠিক না বলে তিনি দিবেন না- এমন কথা সাংবাদিকদের কাছে বলে বেশ বিতর্কের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল। পরবর্তীতে তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অনুদান প্রদান করলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মনে কিছুটা কষ্ট থেকেই যায়। তবে সেই কষ্ট এখন চাপা পড়ে গেছে। নবীনগর পৌরসভা নির্বাচনে হিন্দু (সনাতন) ধর্মাবলম্বী শিব শংকর দাসকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার পিছনে সর্বোচ্চ ভ‚মিকা রাখায় নিজের আগের মনোভাবের কালিমা মোচন করতে পেরেছেন এবাদুল করিম। একই সঙ্গে তিনি দলের প্রার্থীকে জয়ী করতে নেতা-কর্মীদের প্রতিও কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থী শিব শংকরকে পাস করাতে এখন তিনি বেশ আন্তরিক বলেই মনে করা হচ্ছে।  এদিকে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত পৗর নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা শিব শংকর দাস।  সে সময় অনেকেই অভিযোগ তুলেন, আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় এ অবস্থা হয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনের আগে তৎকালীন সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল যথাযথ ভ‚মিকা নেন নি বলেই তখন আওয়ামীলীগ নির্বাচনে জয় লাভ করতে পারেনি। ফয়জুর রহমানের আমলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদটিও হারায় আওয়ামী লীগ।  তবে বর্তমান সাংসদের পাশাপাশি ফয়জুর রহমান বাদল ও তার অনুসারীরাও এবার উঠেপড়ে লেগেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শিব শংকর দাসের জন্য। বর্তমানে দেশের বাইরে থাকা ফয়জুর রহমান বাদল ইতিমধ্যেই শিব শংকরকে বিজয়ী করতে তাঁর অনুসারীদের কাজ করতে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।অনেকেই মনে করছেন, বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যের ‘দুর্নাম’ গোছানোর মোক্ষম সুযোগ এ পৌর নির্বাচন। আর এ কারণেই তাঁরা এবার উঠে পড়ে লেগেছেন দলীয় প্রার্থীর জন্য। আর এটিই মূলত এগিয়ে রাখবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে। এছাড়া বিএনপি দলীয় একাধিক প্রার্থী থাকার সুযোগও আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজে লাগাতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন শিব শংকর দাস। এছাড়া আওয়ামী ঘরানার হিসেবে পরিচিত বশির আহমেদ সরকার পলাশ, মো. পারভেজ হোসেন, মো. মনির হোসেন ও মো. জায়েদ প্যারিন মেয়র পদে লড়ছেন। যদিও বাকি চারজনের পক্ষে দলের উল্লেখযোগ্য কাউকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না।বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন হাজী মো. শাহাবুদ্দিন। তবে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত মেয়র বিএনপিত নেতা মাঈনুদ্দিন মঈনু দল থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া প্রার্থী হয়েছেন সাবেক পৌর প্রশাসক মো. মলাই মিয়া ও বিএনপি ঘরানার মো. ফারুক আহমেদ। এর মধ্যে ফারুক আহমেদ অবশ্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী শিব শংকরকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। দলের এ ‘বিভাজন’ অনেকটাই পিছিয়ে রেখেছে বিএনপি’কে। 

 নগর-মহানগর থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ