শুক্রবার , ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশের দুঃসময়ে ভারত অনেক সহযোগিতা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। অনেক নেতিবাচক কথা বলা হয়েছে। অনেকে বলেছেন এই দেশ টিকবেই না। আবার কেউ বলেছেন বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে ঢুকে যাবে। সময় প্রমাণ করেছে, আমরা আশেপাশের অনেক দেশ থেকে অনেক ভালো অবস্থায় এসেছি। আজকের এই জাহাজ হস্তান্তর অনুষ্ঠান (জাহাজ রফতানি) সেটাই প্রমাণ করে। বাংলাদেশ আজ সেই নেতিবাচক চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমাদের আজকের বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর কাছে বিস্ময়।’

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডে নির্মিত দুটি কার্গো জাহাজ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ৮ হাজার টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই দুটি জাহাজ ভারতের জিন্দাল স্টিল ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কখনও ভারতের কথা ভুলতে চাই না। আমরা জাতি হিসেবে কখনও অকৃতজ্ঞ হতে চাই না। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব বেশি কৃতজ্ঞ। কারণ আমি নিজে তখন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভারত থেকে অনেক সাপোর্ট পেয়েছি। আমার বাবাও একজন মুক্তিযোদ্ধা, তিনিও ভারতের কাছ থেকে সাপোর্ট পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের এক কোটি মানুষকে জায়গা দিয়েছে। তাই আমরা আমাদের সেই দুঃসময়ের বন্ধুকে কখনও ভুলতে চাই না।’

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘আমরা তৈরি পোশাক শিল্পও ভারতে রফতানি করি। আরও অনেক পণ্য আমরা ভারতে রফতানি করি। আজকের বিশ্ব যৌথ অংশধারী ব্যবসায়ের। গত কিছুদিন আগে আমরা ভারতের পূর্বাঞ্চলে গিয়েছিলাম। সেখানেও কথা বলে এসেছি। ভারতের পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকায় কোনও সমুদ্র বন্দর নেই। কিন্তু, আমাদের সমুদ্র বন্দর আছে। এই সমুদ্র বন্দর আমাদের অ্যাডভেন্টেজ। এটি আমাদের প্রয়োজন যেমন মেটাবে তেমনি আমরা পরিকল্পনা নিলে এই সমুদ্র বন্দর থেকে প্রচুর আয়ও করতে পারি। ভারতকে ব্যবহার করতে দিলে আমরা এই সমুদ্র বন্দর থেকে প্রচুর আয় করতে পারবো। ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য মোংলা পোর্ট, চট্টগ্রাম পোর্টের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে। আমাদের পাশে ভারত, নেপাল ও ভুটান আছে। আমরা যদি তাদেরকে আমাদের এই সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করা সুযোগ দেই। তাহলে আমরা প্রচুর লাভবান হবো।’

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ বলেন, ‘এই দুটি জাহাজ রফতানি নিশ্চয় আমাদের দুই দেশের বাণিজ্যকে আরও বাড়াবে। পারসেপশনাল দিক থেকে তাকালে আমরা বাংলাদেশ থেকে দুটি জাহাজ কিনছি, এটি খুব ভালো স্টোরি। তাই আমি খুবই গর্বিত আমি এই ধরনের একটি পর্বের অংশ হতে পেরেছি।’

রিভা গাঙ্গুলী দাশ বলেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্টে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশই জয়সূচক অবস্থানে থাকবে। কারণ এই প্রক্রিয়ায় সব সেবাই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দেবে। অভ্যন্তরীণ জাহাজের ক্ষেত্রে যদি দেখেন, ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্টে যেখানে ৬ হাজার জাহাজ আছে বাংলাদেশের, আর ভারতের রয়েছে মাত্র ৩৮ থেকে ৩৯ জাহাজ। তাই ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ। আর আমাদের জন্য নর্থ-ইস্ট-এ সংযোগ স্থাপন। মুম্বাই থেকে আগে কিছু আসতে যে সময় যেত তার থেকে অনেক কম সময় লাগবে। আর আগে সড়ক পথে আনতে হতো, এখন মুম্বাই থেকে সেসব পণ্য নৌপথে নেওয়া যাবে।’

ওয়েস্টার্ন মেরিনের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৫ সালে ভারতের জিন্দাল স্টিল ওয়ার্কস ওয়েস্টার্ন মেরিনকে চারটি জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়। এই প্রকল্পটি ভারত থেকে প্রাপ্ত বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে সর্বোচ্চ মূল্যের রফতানি আদেশ। এরমধ্যে প্রথম দুটি জাহাজ জেএসডব্লিউ রায়গড় ও জেএসডব্লিউ প্রতাপগড় ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে প্রতিষ্ঠানটির কাছে হস্তান্তর করা হয়। অপর দুটি জাহাজ জেএসডব্লিউ সিংহগড় ও জেএসডব্লিউ লোহগড়িআজ হস্তান্তর করা হলো। প্রতিটি জাহাজের বিক্রয় মূল্য আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা করে ৪টি জাহাজের মূল্য ২০০ কোটি টাকা। ’

 অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ