মঙ্গলবার , ২৩ এপ্রিল ২০২৪

আগষ্ট ট্র্যাজেডী

রাজ্জাক হোসাইন রাজ   রবিবার , ১৫ আগষ্ট ২০২১

পঁচাত্তরের ১৫আগস্ট সুবেহ সাদিকের সময় যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকেবুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকরা ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল, তখন যে বৃষ্টি ঝরছিল, তা যেন ছিল প্রকৃতিরইঅশ্রুপাত। ভেজা বাতাস কেঁদেছে সমগ্র বাংলায়। ঘাতকদের উদ্যত অস্ত্রের সামনে ভীতসন্ত্রস্তবাংলাদেশ বিহ্বল হয়ে পড়েছিল শোকে আর অভাবিত ঘটনার আকস্মিকতায়। কাল থেকে কালান্তরেজ্বলবে এ শোকের আগুন। ১৫ আগস্ট শোকার্দ্র বাণী পাঠের দিন, স্বাধীনতার স্থপতি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী।

বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবেহত্যা করা হলেও তার মৃত্যু নেই। তিনি চিরঞ্জীব। কেননা একটি জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টাএবং স্থপতি তিনিই। যতদিন এ রাষ্ট্র থাকবে, ততদিন অমর তিনি। সমগ্র জাতিকে তিনি বাঙালিজাতীয়তাবাদের প্রেরণায় প্রস্তুত করেছিলেন ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক পাকবাহিনীর বিরুদ্ধেসশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে। তাই চিরঞ্জীব তিনি এ জাতির চেতনায়। বঙ্গবন্ধু কেবলএকজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শের নাম। যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দেশ। বাঙালিজাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনে দেশের সংবিধানও প্রণয়নকরেছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। শোষকআর শোষিতে বিভক্ত সেদিনের বিশ্ববাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন শোষিতের পক্ষে।

পাকিস্তানি শাসন-শোষণেরবিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চসোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার যে ডাক দিয়েছিলেন তা অবিস্মরণীয়।সেদিন তাঁর বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রামস্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই অমর আহ্বানেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিপীড়িত কোটিবাঙালি। সেই মন্ত্রপূত ঘোষণায় বাঙালি হয়ে উঠেছিল লড়াকু এক বীরের জাতি।

আবার ১৯৭১ সালের২৫ মার্চের কালরাতে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেও বঙ্গবন্ধুরকণ্ঠেই জাতি শুনেছিল মহান স্বাধীনতার অমর ঘোষণা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওই রাতেবঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধেরনয় মাস তাকে বন্দি থাকতে হয় পাকিস্তানের কারাগারে। তার আহ্বানেই চলে মুক্তিযুদ্ধ।বন্দিদশায় মৃত্যুর খবর মাথায় ঝুললেও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি অকুতোভয় এ মহাননেতা। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান।বীরের বেশে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু।

দেশে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্তদেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার পাশাপাশি দেশের মানুষকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্তকরেন বঙ্গবন্ধু। দেশগড়ার এই সংগ্রামে চলার পথে তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তার দেশের মানুষকখনও তার ত্যাগ ও অবদানকে ভুলে যাবে না। অকৃতজ্ঞ হবে না। নবগঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানবঙ্গবন্ধু তাই সরকারি বাসভবনের পরিবর্তে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের সাধারণ বাড়িটিতেইবাস করতেন।

মুক্তিযুদ্ধেরপরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তারা একের পর এক চক্রান্তেরফাঁদ পেতেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী উচ্চাভিলাষী কয়েকজন সদস্যকেষড়যন্ত্রকারীরা ব্যবহার করেছে ওই চক্রান্তেরই বাস্তব রূপ দিতে। এরাই স্বাধীনতার সূতিকাগারবলে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে হামলা চালায় গভীর রাতে। হত্যা করে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে। বিশ্ব ও মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্যও নৃশংসতম এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেদিন তারা কেবল বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তার সঙ্গে বাঙালিরহাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতার আদর্শগুলোকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। মুছে ফেলতেঅপপ্রয়াস চালিয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসও। বঙ্গবন্ধুর নৃশংসতম হত্যাকান্ডবাঙালি জাতির জন্য করুণ বিয়োগগাথা হলেও ভয়ঙ্কর ওই হত্যাকাণ্ডে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিতনা করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃতওহয়েছে নানাভাবে। হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল বঙ্গবন্ধুরখুনি খন্দকার মোশতাক সরকার।

১৯৭৫ সালের নির্মমহত্যাকাণ্ড, ২১ বছর পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে প্রচলিত আইনে বিচার শুরু, রায়ঘোষণা ও তা কার্যকর করা; একদা দেশবাসীর কাছে অকল্পনীয় মনে হলেও বাঙালির মুক্তির মহানায়কবঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের প্রাথমিকবিচার হয়েছে সত্য তবুও সেই সময়ের অসংখ্য বিষয় এখনও ইতিহাসে অমীমাংসিত হয়েই আছে। বাংলাদেশেরসুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে ও জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষে ইতিহাসেরসবচেয়ে কালো অধ্যায় ১৯৭৫ সালের “আগস্ট ট্রাজেডি” এর ৪৬ বছর পূর্ণ হলো কিন্তু অমীমাংসিতহাজারো সত্য এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

একজন বিশ্লেষক,গবেষক, পর্যবেক্ষক, কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ বা গোয়েন্দা দৃষ্টিতে নয় একেবারেইদেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার কিছু সহজ প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা আছে; জানি না প্রশ্নগুলোকার কাছে করবো বা কার কাছে করা উচিত। আমার সরল বুদ্ধিতে যতটুকু সম্ভব প্রায় সকল চেষ্টাইকরেছি। বিভিন্ন পত্রিকা, বই, ম্যাগাজিন, অনলাইন সোর্স থেকে কিছুটা জানার চেষ্টা করেছি।রাজনীতিবিদ, সমরবিদ, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, শিক্ষক, আমলা, আইনজ্ঞ, বিচারক এমনকিতদন্তকারী অফিসার; অনেককেই প্রশ্ন করেছি, কেউই এই সরল প্রশ্নগুলোর উত্তর জানে না।

খুব সহজ জিজ্ঞাসাহলেও দায়িত্বশীলদের জন্য প্রশ্নগুলো বিব্রতকর। আমি একজন রাজনৈতিক মাঠকর্মী; আমার নেতৃবৃন্দআমার কাছ থেকে এমনতর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা শোনার জন্যও প্রস্তুত না। দিনশেষেনিজেকে আমি দেশপ্রেমিক ভাবি; কিন্তু প্রশ্নগুলো দেশপ্রেমিক অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানেরজন্যও তেমন সুখকর নয়।

 

লেখক : রাজ্জাক হোসাইন রাজ , সদস্য-বাংলাদেশআওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ

 

 স্বাস্থ্যবার্তা থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ