রবিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব বাজেটের আওতায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘের ১১ কেভি ৩-কোর ৩০০ স্কয়ার মি.মি. আন্ডারগ্রাউন্ড এক্সএলপিই বৈদ্যুতিক ক্যাবলস সরবরাহ নিতে সর্বোচ্চ মানের সরাঞ্জাম নিতে দ্বিধা-দ্বন্দে পড়েছে ডিপিডিসি। আর এক্ষেত্রে ডিপিডিসির কোনো বিশেষ লাভ না হলেও একটি নির্দিষ্ট কোম্পানিকে সুবিধা দেবার বিষয়কে কেন্দ্র করে এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।   

তথ্য মতে, উক্ত টেন্ডারে প্রায় দুবছর আগে প্রথমবার টেন্ডার বাতিল হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে রি-টেন্ডার হবার পর পর্যালোচনা শেষে তা কার্যাদেশ পর্যায়ে আসলেও ডিপিডিসি সিলেক্ট হওয়া পলি ক্যাবলস নামক কোম্পানির দরপত্রের শর্তানুযায়ী সিসিভি লাইন নেই মর্মে অভিযোগ ওঠে। পলি ক্যবলসে’র টেন্ডারে তথ্য জালিয়াতির  প্রমাণ হলে উক্ত টেন্ডারে দ্বিতীয় হওয়া  কোম্পানিকে কার্যাদেশ না দিয়ে ২৭ জুন ২০২২ তারিখে আবার সেই টেন্ডার তৃতীয়বারের মত রিটেন্ডার হয়। 

এই তৃতীয় দফায় পলি ক্যাবল কোম্পানিকে টেন্ডারে অংশগ্রহণের অযোগ্য অবস্থানে রাখার কথা। এটেন্ড করার ক্ষেত্রে যেখানে ডিপিডিসি এই প্রতিষ্ঠানকে জালিয়তির কারণে শাস্তির আওতায় আনার কথা, সেটি না করে বরং নাটকীয়ভাবে উক্ত পলি ক্যাবলস কোম্পানি যাতে অংশগ্রহণ করে কার্যাদেশ পায় এজন্য সেখানের নতুন ফর্মূলা যুক্ত করা হয়। এই ফর্মূলায় বুয়েটকে পলি ক্যাবলস থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকারও বেশি স্পন্সর করার ফাঁদে ফেলে উক্ত কোম্পানির যে ম্যাশিন রয়েছে ‘এইচসিভি’কে বুয়েট থেকে ১১ কেভি লাইনের জন্য জায়েচ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সামঞ্জস্যপূর্ণ না থেকে বরং সাংঘার্ষিক হওয়ায় জড়িতদের নিয়ে নানা সমালোচনা ওঠে এবং বুয়েট ও ডিপিডিসি প্রশ্নের মুখে পড়ে। ফলে তৃতীয় দফায় সংশোধনী করে ডিপিডিসি চতুর্থ পর্যায়ে দরপত্র দেয়।   

এসব সাংঘার্ষিক নানা বিষয় সমালোচনার পর চতুর্থ দফায় সংশোধনী দরপত্রে সিসিভি, ভিসিভি,এইচসিভি তুলে দিয়ে আবারো কৌশলী ফর্মূলা সাবমিট করা হয়েছে যাতে উক্ত নির্দিষ্ট কোম্পানি এটেন্ড করতে পারে এবং কাজ পাইয়ে দেবার সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে এই নির্দিষ্ট কোম্পানির সুযোগ পেলে ডিপিডিসির কি লাভ তা একটি বিরাট প্রশ্ন। অভিযোগ উঠেছে এখানের নির্দিষ্ট কোনো একটি সুবিধাভোগী মহলের জন্য ডিপিডিসি এই গ্যাড়াকলে পড়েছে। এর ফলে সর্বোচ্চ মানের ক্যাবলস নেওয়ার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকলেও সুবিধাভোগী ফর্মূলায় দ্বিধা-দ্বন্দে পড়েছে ডিপিডিসি। ঊল্লেখ্য পলি ক্যাবলস কোম্পানি এর আগে ডিপিডিসি’র একটি প্রকল্পে ত্রুটিপূর্ণ এ্যাবড়ো থ্যাবড়ো ক্যাবলস সরবরাহ করেছে। যার কারণে ডিপিডিসির সংশ্লিষ্ঠ বিভাগ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলো।

অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, নির্দিষ্ট কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার জেরই হচ্ছে এইচসিভি লাইন জায়েচ থাকতে হবে। কিন্তু এইচসিভি লাইন বিষয়টি আসলে জোড়াতালি বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। কেননা এটি ইলাস্ট্রোমেরিক রাবার ইন্সুলেটেড ক্যাবলস উৎপাদন প্রসেস বলে উল্লে¬খ করছে মেশিন উৎপানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কথা হচ্ছে ডিপিডিসি চেয়েছে নাইট্রোজেন কিউরিং করা এক্সএলপিই ক্যাবলস, যা সিসিভি লাইন মেশিনের কাজ। অন্যদিকে এইচসিভি লাইনে ইলাস্ট্রোমেরিক রারার ইন্সুলেশন প্রসেস যেটা এক্সএলপিই নয়। দুটো দুই ধরনের প্রসেস এবং এই প্রসেসিং সাংঘার্ষিক। ডিপিডিসি তো রাবার এট্রুশন ক্যাবলস সরবরাহ নেবার কথা উল্লে¬খ করেনি। তাহলে এইচসিভি প্রসেস এখানে কিভাবে কেনো এলো। 

অন্যদিকে সরকারি দফতরে এ ধরনের ক্যাবলস সরবরাহ দেবার ক্ষেত্রে পূর্বের অভিজ্ঞতার বিষয়টিতে যেভাবে পরিবর্তন আনা হয়েছে সেটাও যথার্থ সময়োপযোগী নয় বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। ১১ কেভি ৩ লেয়ার এক্সএলপিই ক্যাবলস সরবরাহের জন্য শুধুমাত্র ইলেক্ট্রিক্যাল সরঞ্জাম কন্ডাক্টরসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট সরবরাহের অভিজ্ঞতা চাওয়া একই ফর্মূলার নতুন ভার্সন বলে মনে করছেন অনেকে ।  

বিষয়টি নিয়ে ডিপিডিসির অতিরিক্ত সচিব ও পরিচালনা পরিষদের সদস্য আরফিন আরা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি জানান প্রতিটা প্রতিষ্ঠানই চাইবে প্রতিযোগীতামূলক দামে ভালো জিনিস সরবরাহ নিতে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের নির্বাহীগণ ভালো বলতে পারবেন। 

ডিপিডিসির আইসিটি এন্ড প্রকিউরমেন্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল্লাহ নোমান বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, সংগত কারণেই দরপত্রের মাধমে আমরা সেরা মানের সরাঞ্জাম সরবরাহ করবো। তবে বিষয়টি সম্মিলিত ভাবেই হয়ে থাকে। এধরনের বিষয়ে রিকমান্ডের পর টিইসি বা টেন্ডার ইভ্যলুশন কমিটি সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে। পলি ক্যাবলস কোম্পানি তথ্য জালিয়তি করে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সেই দরপত্রে পূনরায় অংশগ্রণের সুযোগ করে দেওয়া কি ডিপিডিসির জন্য বদনামের বিষয় নয় ? প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ নোমান বলেন, এটা অন্য প্রসঙ্গ। এজন্য ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ যেটা ভালো মনে করে সেটাই করবে।   

এ বিষয়ে কথা বললে, বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রোনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ আইনুল হক বলেন, আমাদের যেটা বলার তা বলে দিয়েছি। ১১ কেভির জন্য এইচসিভি’র ক্যাবলস চালানো যায়। কিন্তু সিসিভি লাইনে উৎপাদিত ক্যাবলস হলে ভালো হয়। ভালোর তো শেষ নেই। দুটোর মধ্যে কোয়ালিটিগত পার্থক্যতো অবশ্যই আছে। এখন ডিপিডিসি কোনটা নেবে সেটা তাদের বিষয়। 

বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতের একজন সিনিয়র আইনজীবি বলেন, রিটেন্ডারের ক্ষেত্রে সংগত কারণ ব্যতিরেকে কিছু পরিবর্তন করা নিয়ম বহির্ভূত। এছাড়া উল্লেখিত মেশিনারীজ যদি এদেশে না থাকে সেক্ষেত্রেও পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু উল্লেখিত উৎপাদন প্রসেস যদি উন্নত হয়ে থাকে এবং এধরনের একাধিক প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করে সে ক্ষেত্রে এর চেয়ে নিম্নমানের সরাঞ্জাম সরবরাহ করা জনস্বার্থ বিরোধী। আর এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতি পক্ষপাতিত্বের ইঙ্গিত বা প্রমাণ স্পষ্ট হলে জড়িতরা পিআইএল বা পাবলিক ইন্টারেস্ট ল বিধানে শাস্তির আওতায় আসবে। 

 আইন-অপরাধ থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ