শিরিন ফেরদাউস : বয়সের ঘনকৃষ্ণ বীণ উপেক্ষা করে আমরা সবসময় মেতে থাকি আনন্দ দীঘির শীতল জলে। মন খারাপের কালো সুতায় রাঙিয়ে রাখি, আমাদের রঙধনু।
গতানুগতিক জীবনধারার গন্ডি পেরিয়ে সমবয়সী একদল বন্ধু সংসার, কর্মস্থল এবং নানান দায়িত্ব ভুলে হারিয়ে যাই আপন ভুবনে। নিজেদের জন্য বরাদ্দ করি কিছু সুন্দর মূহুর্ত। ভাগ করে নিই নিজেদের দুঃখ কষ্টকে!
হঠাৎ কারো মন খারাপ হলে বলি, আয় ডুবে যাই! কফির কাপ কিংবা চিরচেনা সেই ডিশে! এভাবেই দিনভর হৈ চৈ আর আনন্দের গলাগলিতে একে অপরকে ভাসিয়ে দিই মন খারাপের চিঠিতে।
প্রতিটি মানুষের জীবনে সবকিছুর পরও নিজের জন্য কিছু সময় থাকা প্রয়োজন। সে প্রয়োজনের সমারোহে আমাদের বন্ধুত্বের এই বন্ধন। আমরা সমবয়সী। কেউ পুরোদস্তুর গৃহিণী, সংসার সামলিয়ে হাপিয়ে উঠি। কেউ উদ্যোক্তা, কেউবা চাকুরীজীবি। আবার কেউ লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কেউ শিক্ষিকা আবার কেউ কেউ নিজের ব্যবসা নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ততার ডাকপিয়ন।
ব্যক্তি জীবনের হাজারো ব্যস্ততায় ও সুপ্ত মনের খোলা আকাশে আমরা সবাই সবার জন্য একরাশ শুভেচ্ছা বার্তা হয়ে নিবেদিত থাকি ‘গার্লস গ্যাং’ নামে একটি ফেসবুক মেসেন্জার গ্রুপের সুখ কৌটায়।
তাই তো বিভিন্ন বিশেষ দিন এবং মাঝে-সাঝে কফির আড্ডায় চলে আমাদের আনন্দ বিলাস আয়োজন। সর্বশেষ নারী দিবসেও বন্ধুরা মিলে এই বিশেষ দিন উদযাপন করেছিলাম একইরকম শাড়ি পরে, হাতে বেগুনি রাখিবন্ধন, বেগুনি ফুলের রিং পরে। কেটেছি বেগুনি রংয়ের কেক। নতুনত্বে করেছিলাম ফটোসেশন।
সংসার এবং দায়িত্বকে কিছু সময়ের জন্যে আড়ালে রেখে এই আমাদের ভালো থাকা! এটাই আমাদের প্রাণের আবেদন! আমাদের প্রাণের গান! একটা নির্ধারিত বয়স এবং সময়ের পরে বেশিরভাগ নারীরা মানসিকভাবে বুড়িয়ে যায়। গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে ডিপ্রেশনে থাকে। অবসন্ন এবং একাকিত্বের গ্লানিতে জীবন হয়ে উঠে স্থির পুকুরের ছায়াজল।
বয়সের সংখ্যা উপেক্ষা করে এই স্থিরতা থেকে বের হয়ে নিজের রঙ্গে রাঙ্গানোই হলো আমাদের এক উদ্যোম প্রচেষ্টা। আমরা স্থির পুকুরের জল নয়, আমরা হতে চাই, প্রজাপতি। আমরা হতে চাই বুনো ফড়িংয়ের ডানা। যে ডানায় উড়বো সবাই! গাইবো বেঁচে থাকার সেই গান...!
লেখক : কবি ও সাহিত্যিক