ঢাকা : সন্তান ও পরিবার সামলিয়ে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে মেলে ধরা একজন নারীর জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের। তবু কঠোর পরিশ্রম আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশে আজ লাখো নারী প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন উদ্যোক্তা হিসেবে।
২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে দেশের ব্যবসা ছিল চরম বিপর্যস্ত। আবার একের পর এক লকডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অনেক ব্যবসা। কর্মহীন হয়ে পড়ে লাখো মানুষ। এমন দুঃসময়ে অনলাইন ব্যবসা কিছুটা গতি পায়। অনেকেই অনলাইনে তাদের পণ্য কেনাবেচা শুরু করেন।
এই সময়ে ঘরবন্দি শিরিন আকতারও নতুন কিছু ভাবছিলেন। যেই ভাবা সেই কাজ। পুরান ঢাকার বউ তিনি। নানাবাড়িও পুরান ঢাকায়। সিদ্ধান্ত নিলেন, খাঁটি মশলার ব্যবসা করবেন। এভাবেই পথচলা শুরু। নিজের তত্ত্বাবধানে মশলা কিনে, মেশিনে ভাঙিয়ে প্যাকেটজাত করলেন।
ফেসবুকে মশলার প্যাকেটের ছবি পোস্ট করে শুরু করলেন ব্যবসা। অল্প লাভে নির্ভেজাল মশলা মানুষের কিচেনে পৌছে দেওয়ার ব্রত নিয়ে কাজ এগিয়ে নিতে থাকলেন। নিজের বাসার নিচেই দোকানও ভাড়া করলেন। এভাবেই চলল বছরব্যাপী। পর্যায়ক্রমে তিনি ড্রাইফ্রুট প্যাকেটজাত করে বিক্রি শুরু করলেন। ব্যবসা ভালোই চলছিল।
কিছুদিন পর চালু করলেন পোশাক ব্যবসা। নাম দিলেন ‘উড়ান’। শোরুম চালু করলেন। বেশ ভালোই চলছে ‘উড়ান’। শিরিন আকতারের স্বপ্ন ‘উড়ান’ একদিন দেশসেরা ব্যাণ্ড হবে। সেই স্বপ্নের পথেই হাঁটছেন উদ্যোক্তা শিরিন আকতার।
১৯৮০ সালের ২৮ এপ্রিল রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে জন্মগ্রহণ করেন শিরিন আকতার। বর্তমানে থাকেন রামপুরা বনশ্রীতে। তিন ভাই ও একমাত্র বোন নিয়ে ছিল ব্যবসায়ী বাবার সংসার। তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও লালমাটিয়া কলেজে পড়া শিরিনের স্বপ্ন চিকিৎসক হবেন। কিন্তু তা আর হলেন কোথায়।
ব্যবসায়ী এবং সৌখিন ফটোগ্রাফার মতিউর রহমানের সঙ্গে ঘর বাঁধেন ১৯৯৯ সালের ১৮ নভেম্বর। এই দম্পতির একমাত্র মেয়ে ত্বোয়াসিন রহমান আইডিয়াল স্কুল থেকে এইচএসসি চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।। মেয়েকে স্কুলে ভর্তির পর শিরিন কিভাবে শিক্ষক হলেন, সেটিও এক দারুন গল্প।
মেয়েকে যখন স্কুলে ভর্তির করেন, তখন থেকে মেয়ে ও তার বান্ধবীদের পড়ানো শুরু করেন শিরিন।পরে তা শিরিনের পেশায় তার রূপলাভ করে। দীর্ঘ একযুগ শিক্ষকতা করেই কাটিয়েছেন শিরিন আকতার। আর করোনা মহামারিতে পুরোপুরি উদ্যোক্তা হয়ে উঠেন ব্যবসায়ী পরিবারে বেড়ে উঠা শিরিন।