নিজস্ব সংবাদদাতা:আব্দুস সামাদ অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ৩৭ বছর আগে। সে সময় পরিবারে আর্থিক অসচ্ছলতা তাকে ঘিরে ধরে। চাকরি নেন বাংলাদেশ পুলিশে। সেই যে কর্মজীবন শুরু, থেমে যায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা। কিন্তু দমে যাননি সামাদ। তাই-তো বয়স যখন গড়িয়ে বৃদ্ধকালে, তাক লাগালেন সবাইকে। ৫৭ বছর বয়সে এসে সুনামের সঙ্গে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোলেন তিনি। এখানেই শেষ নয়। চাকরির মেয়াদ শেষে চিকিৎসাসেবায় নিজেকে মননিবেশ করতে স্বপ্ন বুনছেন সামাদ। সেজন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ওপর মেডিকেল কলেজ থেকে ডিগ্রি নিতে চান তিনি।নাটোরের মহর কয়া নতুনপাড়া কারিগরি ইনস্টিটিউট থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.২৫ পেয়েছেন আব্দুস সামাদ। গতকাল রবিবার প্রকাশিত এসএসসির ফলে তার এ কৃতিত্বের খবরে আনন্দ বইছে কর্মস্থল বগুড়া জেলা পুলিশে। জেলা পুলিশের ট্রাফিক কনস্টেবল আব্দুস সামাদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। সোমবার (১৩ মে) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আব্দুস সামাদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান তিনি।এ সময় পুলিশ সুপার সুদীপ বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) বগুড়া জেলা পুলিশের জন্য ছিল আনন্দের দিন। আমাদের ট্রাফিক বিভাগের সদস্য আব্দুস সামাদ ৫৭ বছর বয়সে এসএসসি পাস করেছেন। এই খবর আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। যারা পুলিশে চাকরি করে তাদের কর্মময় জীবন সংগ্রামের। তাদের সংগ্রামী জীবনের তেমন কোনো পূর্ণতা নেই। আব্দুস সামাদ একান্ত অধ্যাবসায়, কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠায় এবং আন্তরিকতায় বলীয়ান হয়ে প্রমাণ করেছেন– মানুষ চাইলে তার স্বপ্ন ছুঁতে পারে। যারা পিছিয়ে পড়া মানুষ আছে, যারা মনে করে তাদের জীবনে প্রাপ্তি বলে কিছু নেই– তাদের ধারণা ভ্রান্ত করে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আব্দুস সামাদ।’১৯৬৮ সালে রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার আশরাফপুর গ্রামে আব্দুস সামাদের জন্ম। ১৯৮৭ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করে যোগ দেন পুলিশের। নিয়োগ পান চট্টগ্রাম মহানগরে। এরপর চাকরিসূত্রে তিনি বগুড়ার শেরপুর, সদর ও নন্দীগ্রাম ডিএসবি, সদর কোর্ট এবং সর্বশেষ বগুড়া ট্রাফিকে কর্মরত আছেন।আব্দুস সামাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাকরি শেষে হোমিও চিকিৎসায় যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন তার। কিন্তু সেজন্য এসএসসির সনদপত্র প্রয়োজন। সিদ্ধান্ত নেন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২২ সালে তিনি নাটোর মহর কয়া নতুনপাড়া কারিগরি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেই ইনস্টিটিউট থেকেই এ বছর তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।এই বয়সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ করতে গিয়ে পরিবার ও নিজের কর্মস্থলের সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান সামাদ। তবে যাত্রা অতো সহজ ছিল না। শুনতে হয়েছে অনেক মানুষের কটু কথা। সামাদ বলছিলেন, অনেক আগে থেকেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রতি আকর্ষণ জন্মায় তার। চাকরির পাশাপাশি নিজ প্রচেষ্ঠায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা-সংক্রান্ত পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন। এসএসিতে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ায় এখন ইচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেওয়া।আঃ সামাদ বলেন, ‘আমার মা বেঁচে আছেন। তার বয়স ১০০ বছর। আমার এ সফলতায় মা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন। পরিবার ও ডিপার্টমেন্টের উৎসাহে আমি খনও পিছপা হইনি। আমার চাকরি মেয়াদ আছে দুই বছর ১০ মাস। সিদ্ধান্ত নিয়েছি– ডিএইচএমএস (ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি) কোর্সে ভর্তি হওয়ার। অবসরে যাওয়ার পর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের সেবা করতে চাই।’