ব্রিটেনেরর সাধারণ নির্বাচনে এবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের জয়জয়কার। লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন ও ষ্টেপনি আসন থেকে টানা পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রোশনারা আলী। হ্যামস্টেড ও হাইগেট আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র টিউলিপ সিদ্দিক। এদিকে, বাংলাদেশি পপলার অ্যান্ড লাইম হাউজ আসন থেকে আপসানা বেগম দ্বিতীয়বারের মতো জয়লাভ করেছেন। আর লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন আসনে টানা চতুর্থবারের মতোন জয়ী হয়েছেন ড. রূপা হক। তারা সবাই বিরোধী লেবার পার্টির প্রার্থী।
রোশনারা আলী
রোশনারা আলী মোট ১৫ হাজার ৮৯৬টি ভোট পেয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো জিতেছেন। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আজমল মাশরুর পেয়েছেন ১৪ হাজার ২০৭টি ভোট। ৪ হাজার ৭৭৭ ভোটে তৃতীয় হয়েছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী রাবিনা খান।
এ আসনের অপর দুই স্বতন্ত্র বাংলাদেশি প্রার্থী স্যাম উদ্দীন ৩২৫টি এবং মোঃ সুমন আহমদ ৩১৫টি ভোট পেয়েছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক
হ্যামষ্টেড ও হাইগেট আসনে মোট ২৩ হাজার ৪৩২টি ভোট পেয়েছেন টিউলিপ। এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামস ভোট পেয়েছেন মাত্র ৮ হাজার ৪৬২টি।
২০১৫ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টির নিরাপদ বা ‘সেফ সিট’ নয় এমন আসনে মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারই বাজিমাত করেন টিউলিপ। দুবার পার্টির ছায়া মন্ত্রীসভায় স্থান পান তিনি। লেবার পার্টি যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় আসায় এবার মন্ত্রীসভাতেও জায়গা পেতে পারেন।
আপসানা বেগম
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন লেবার পার্টির আপসানা বেগম। মোট ১৮ হাজার ৫৩৫টি ভোট পেয়েছে তিনি।
আপসানার প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রিন পার্টির নাথালি বেইনফিট ৫ হাজার ৯৭৫টি, কনজারভেটিভ পার্টির ফ্রেডি ডউনিং ৪ হাজার ৭৩৮টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী আপসানার প্রাক্তন স্বামী এহতেশামুল হক ৪ হাজার ৫৫৪টি ভোট পেয়েছেন।
পূর্ব লন্ডনের অপর আসনটিতে গতবার লেবার পার্টির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের বিরোধিতার মুখেই লেবারের মনোনয়ন পা্ন এবং নির্বাচনে জয়ী হন আপসানা বেগম।
টাওয়ার হ্যামলেটসের শ্যাডওয়লে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
বাংলাদেশে তার বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। আফসানার বাবা মনির উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর ছিলেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার এমপির মধ্যে আপসানাই বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সভা সমাবেশে সবচেয়ে বেশি সময় দেন।
ড. রূপা হক
লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন আসনে লেবার পার্টির মনোনয়নে ড. রূপা হক ২২ হাজার ৩৪০টি ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির জেমস উইন্ডসর ক্লাইভ পেয়েছেন ৮ হাজার ৩৪৫টি ভোট।
পুরোদস্তুর রাজনীতিতে নাম লেখানোর আগে ৫২ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ বাংলাদেশি কন্যা লন্ডনের কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানে শিক্ষকতা করতেন। কিংসষ্টন ইউনিভার্সিটিতে সর্বশেষ সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এ কলামিষ্ট ও লেখক।
১৯৭০ সালে বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে আসা মোহাম্মদ হক ও রওশন আরা হক দম্পতির তিন কন্যার মধ্যে বড় রুপা হক। তার বাবার বাড়ি পাবনা শহরের কুঠিপাড়ায়। সাদামাটা জীবনযাপন ও বিনয়ী ব্যবহারের জন্য সবার প্রিয় পাত্র তিনি।
হারলেন যারা
টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন ও ষ্টেপনি আসন থেকে তন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুর ১৪ হাজার ২০৭ ভোট পেয়ে কঠিন লড়াই করে হেরেছেন। এই আসেনে রুশনারা আলী ১৫ হাজার ৮৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
লেবার পার্টি থেকে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দিতা সত্ত্বেও অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী রুফিয়া আশরাফ ও রুমী চৌধুরী। যে আসনগুলোতে তারা হেরেছেন, সেগুলো কনজারভেটিভের দুর্গ ও ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত।
সাবেক মেয়র রুফিয়া আশরাফ সাউথ নর্থামটনশায়ার আসনে ১৫ হাজার ৫০৪টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। এই আসনে ১৯ হাজার ১৯১টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির সারাহ বুল।
উইথাম আসনে কনজারভেটিভের তারকা প্রার্থী প্রীতি প্যাটেল ১৮ হাজার ৮২৭টি ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। এই আসনে ১৩ হাজার ৬৮২টি ভোট পেয়েছেন কাউন্সিলর রুমী চৌধুরী।