বাংলাদেশে ছাত্র জনতারঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতন হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো সহজহবে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন যে সরকার গঠিত হবে তাকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতেহবে।
পদত্যাগ করে শেখ হাসিনারদেশত্যাগের পর যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হতে চলেছে তাতে নেতৃত্ব দেবেন ৮৪ বছর বয়সিশান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শেখ হাসিনার পদত্যাগে গুরত্বপূর্ণভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। দেশের আগামীর পথরেখা তৈরিতেও সেনাবাহিনীকে ভূমিকা পালন করতেহবে।
নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকেমূলত পাঁচটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
সেনাবাহিনী: অন্তর্বর্তীসরকার বেসামরিক নেতৃত্বাধীন হতে চলেছে, তবে সেনাবাহিনীর হাতে কতটা নিয়ন্ত্রণ থাকবেতা স্পষ্ট নয়।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইলসনসেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, 'এই অন্তর্বর্তীকালীনসরকারে সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের প্রধান ভূমিকা থাকবে, এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে তারা নেতৃত্বনা দিলেও।'
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারেরদাবিতে আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও সরকারের শেষ সময়ে এসে সামরিক বাহিনীর অবস্থান সরকারেরভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।
বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগেরব্যাপারে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে একমত হয়নি সেনাবাহিনী। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিসেনাবাহিনীর আনুগত্যের অবসান শেখ হাসিনার পতন ঘটায়।
কুগেলম্যান আরও বলেন,'বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত হলে সেটি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণকেপাকাপোক্ত করতে পারে বলে বাংলাদেশে অনেকে আশঙ্কা করেন। তবে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে বাংলাদেশেরসেনাবাহিনী রাজনীতির ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে না যেমনটা কয়েক দশক আগেও ঘটেছে।
নিরাপত্তা: বিক্ষোভকারীও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে কয়েক সপ্তাহের সংঘর্ষে ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করারপর তার সহযোগীরা জনরোষের মুখে পড়ছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনায়উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালেরস্মৃতি সিং বলেছেন, মানুষের জীবনধারণের অধিকার, বাকস্বাধীনতার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশেরসুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সহিংসতা বন্ধ করা যেকোনো অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য প্রথম কাজহওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীযদি নিরপেক্ষভাবে সরকারকে সহযোগিতা করে তাহলে পরিস্থিতি শান্ত হবে বলে তিনি বিশ্বাসকরেন।
অর্থনীতি: ২০০৯ সাল থেকেবাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের বেশি ছিল। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ২০২১ সালে ভারতকে ছাড়িয়ে যায়।
কিন্তু অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিরসুফল বাংলাদেশে সবাই পায়নি। ২০২২ সালের সরকারি হিসাব বলছে, ১৫-২৪ বছর বয়সি ১ কোটি ৮০লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মহীন ছিল।
সাম্প্রতিক অস্থিরতা গার্মেন্টসশিল্পকেও নাড়া দিয়েছে। সহিংসতার মুখে গার্মেন্টস কারখানাগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে।
বাংলাদেশে ৫৫ বিলিয়ন ডলাররপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮৫ শতাংশই আসে এই খাতের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কারখানা থেকে।
লিভাইস, জারা এবং এইচএন্ডএমসহবহু শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করে। পোশাক রপ্তানিতে চীনেরপরই বাংলাদেশের অবস্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক প্রস্তুতকারকহুলা গ্লোবাল জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে তাদের কিছু উৎপাদন সরিয়ে নিয়েছে। কোম্পানির প্রধানকরণ বোস বলেন, আমরা বছরের বাকি সময়ে বাংলাদেশে যাওয়া সব নতুন অর্ডার বন্ধ করে দিয়েছি।
নির্বাচন: গত জানুয়ারিমাসে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনে জয়লাভ করে সেই নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্য কোনোবিরোধীদল ছিল না।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিসগ্রুপের বিশ্লেষক থমাস কিন বলেছেন, বিক্ষোভ আন্দোলন ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়ার কারণেরএকটি অংশ হলো দেশটি ১৫ বছরে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
'অন্তর্বর্তী সরকারকে বাংলাদেশেগণতন্ত্র পুনর্গঠনের দীর্ঘ কাজ শুরু করতে হবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেই পথ থেকে সরেগিয়েছিল বাংলাদেশ।'
অন্তর্বর্তী সরকার এখনওগঠিত না হওয়ায়, এটি কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে, কখন নির্বাচন হতে পারে এবং কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাকরতে পারে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
ন্যায়বিচার: বাংলাদেশেসেনাবাহিনী ও পুলিশকেই জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে যারা কিনা আন্দোলন দমনে ব্যর্থহয়েছে।
শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেপুলিশ প্রধান এবং একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আন্দোলন চলাকালেযারা গ্রেফতার হয়েছেন তারা মুক্তি পেতে শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক বন্দিরাও মুক্তহচ্ছেন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিকসমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, 'আশা করি এই নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন করে কাজশুরু করবে এবং একটি নতুন ব্যবস্থা ফিরবে... যেটি বিশ্বাসের উপর নির্মিত হবে এবং জনগণকেজবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।'
অনেক বিক্ষোভকারী শেখ হাসিনারবিচার দাবি করবেন এবং শেখ হাসিনার মিত্রদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
ক্রাইসিস গ্রুপের কিন জানান,নতুন প্রশাসনের 'সাম্প্রতিক সময়ে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্তকরা উচিত'।