বুধবার , ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দালালির খেসারত

পালিয়েছেন অনেক অভিনেত্রী-অভিনেতা

আনন্দলোক ডেস্ক   মঙ্গলবার , ২০ আগষ্ট ২০২৪

শিক্ষার্থীদেরবৈষম্যবিরোধী প্রবল আন্দোলনের তোপে পড়ে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেদেশ ছেড়ে পলায়ন করেন শেখ হাসিনা। এরপরই ঘটতে থাকে নাটকীয় পরিবর্তন। ক্ষমতার পালাবদলেদেখা যাচ্ছে এখন অনেক কিছু। সরকারের দালালি করে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন অভিনয়শিল্পীরাও। এখন দালালির খেসারত দিতে হচ্ছে তাদেরও। কেউ দেশ ছেড়ে পলায়ন করছেন, কেউ বাকাজ না পাওয়াসহ নানাবিধ সংকটে পড়েছেন। সরকার পতনের পর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না অনেক তারকাঅভিনয়শিল্পীর, সোশ্যাল মিডিয়াতেও নেই বেশির ভাগ শিল্পীর কার্যক্রম। রাজনৈতিক পরিচয়েরকারণে হামলার শিকারও হয়েছেন কয়েকজন।

 

২০১৮সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক-বিষয়ক সম্পাদক ছিলেনঅভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। সরকারের সব কার্যক্রমে থাকেন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ করা নির্বাচনেনৌকার হয়ে একই আসন থেকে মনোয়ন ফরম কিনেছিলেন শমী কায়সার এবং রোকেয়া প্রাচী। দুইজনইআশাহত হয়েছেন। এবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়াসহ দলটির অভ্যন্তরীণ ‘আয়নাঘরেরভয়াবহ রোমহর্ষক নৃশংসতা প্রকাশ, হাজার হাজার মানবাধিকার লঙ্ঘন, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার,পিলখানা হত্যাকাণ্ড রহস্য, পলায়নের সময় শেখ হাসিনা নিজে চার-পাঁচ বস্তা ডলার নিয়ে যাওয়াপ্রভৃতি প্রকাশের পরও রোকেয়া প্রাচী দলটি সম্পর্কে নীরবতা পালন করেননি। এটা কেউ দলেরবিষয়ে সাইকো প্যাথ হলেই করতে পারে। সাইকো প্যাথ হলেও একটা গোটা পরিবারের সবাই একই দলকরতে পারে। যারা সাইকো প্যাথ, তাদের চিন্তার কোনো স্বাধীনতা থাকে না। রোকেয়া প্রাচীতেমনি সাইকো প্যাথ। যদি দলের নৃশংসতা, হিংস্রতার বিরুদ্ধে মানবিক হৃদয়ের প্রকাশ নাঘটে, তা হলে বুঝতে হবে ব্যক্তি হিসেবে সে নিজেও তেমন সাইকো প্যাথ নৃশংস, হিংস্র স্বভাবেরনারী। এ জন্যই দলের হয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রাচী। কোনো শিল্পীইএমন নৃশংস, হিংস্র হায়েনার স্বভাব হতে পারে না। তাই অনেকে বলেন, ‘রোকেয়া প্রাচী ভালোঅভিনেত্রী হতে পারেন, কিন্তু কিছুতেই ভালো শিল্পী নন

 

নয়তকতটা হিংস্র হায়েনাস্বভাব নৃশংস হলেই বলতে পারেন, ‘প্রয়োজনে ১৫ আগস্ট একাই যাব বঙ্গবন্ধুরপ্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। ১৪ আগস্ট বিকালেই তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুরস্মৃতিবিজড়িত বাসভবনের সামনে হাজির হন। এ সময় আরও ৭০-৮০ জন সংস্কৃতিকর্মী রোকেয়া প্রাচীরসঙ্গে যোগ দেন। সন্ধ্যায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের বাইরেস্মৃতিফলকে মোমবাতি প্রজ্বলন করেন তারা।

 

 

শাকিবছুটবেন কলকাতায়...

একপর্যায়েরোকেয়া প্রাচীর ওপর হামলা চালানো হয়। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রোকেয়াপ্রাচী দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। তার সে পরিচয়ের কারণেসোশ্যাল মিডিয়াতেও নানা কটাক্ষ শুনতে হয়েছে হিংস্র হায়েনা প্রাণের অভিনেত্রীকে। একইরাতে অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বেশ কয়েকজন। খবরটি নিশ্চিতকরেছেন অভিনেতা সাজু খাদেম ও অভিনেত্রী বিজরী বরকতুল্লাহ। তারা জানান, বাড়িতে হামলাহলেও নিরাপদে আছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। ২০১৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরহয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪-এর প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা।

 

 

এছাড়া পাঁচবারের এমপি আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক নারী সংরক্ষিত আসনের এমপি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী তারানা হালিমের কোনো খোঁজ নেই কোথায় আছেন তারা। পলাতক আছেন অভিনেত্রী সোহানাসাবাও। এদিকে ৫ আগস্টের পর থেকে খোঁজ নেই অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদের। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনেআওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করে ঢাকা-১০ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গুঞ্জনআছে, এই মুহূর্তে ভারতে আছেন ফেরদৌস। অনেকের ধারণা, দেশেই আছেন তিনি।

 

ফেরদৌসেরমতো আত্মগোপনে আছেন চিত্রনায়ক রিয়াজও। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার খবর না মিললেও আওয়ামী লীগেরবিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামনের সারিতেই দেখা যেত এই অভিনেতাকে। একই অবস্থা আওয়ামী লীগেরসাবেক সংসদ সদস্য ও সঙ্গীতশিল্পী মমতাজের। তারও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ২০০৮ সালেসংরক্ষিত মহিলা আসনে এবং ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিতহয়েছিলেন।

 

এদিকে১৩ আগস্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব)সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শমী কায়সার। বেশ কয়েক বছর ধরে অভিনয় থেকে দূরে থাকাশমী কায়সার ব্যস্ত ছিলেন ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়ে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততিনি।

 

রাজনীতিরসঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সমর্থনে কথা না বলায়রোষানলে পড়েছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। মায়ের অসুস্থতার কারণে ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেননা জানানোর পরও অভিনেতার দিকে ধেয়ে আসে নেতিবাচক মন্তব্য। যদিও তিনি প্রথমে আন্দোলনেছয় ছাত্রের হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। বলেন, ‘গুলি কেন করতে হলো।কিন্তু কথাটিও যে ছাত্রদের পক্ষে যায় না, সেটা বোঝা গেল পরে আর কিছু না বলায়। মনে হয়প্রশ্নটি তিনি পুলিশকে করেছেন এবং এরপর হয়ত এর সদুত্তর পেয়ে গেছেন। তাই আর কোনো প্রশ্নকরেননি পুলিশের হত্যার মহোৎসব করা নিয়ে।

 

শিল্পীদেরওপর হামলা ও আক্রোশের প্রতিবাদ করেছেন অনেক শিল্পী। রাজনৈতিক পরিচয় নয়, শিল্পীদের বিচারকরা উচিত তাদের কাজ দিয়ে, এমনটাই মনে করেন অনেকে। তবে কেউ কেউ আবার বলছেন, শিল্পীদেরনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ না করাই ভালো। অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম বলেন,‘সক্রিয় রাজনীতি শিল্পীদের কাজ নয়। শিল্পী তার শিল্পকর্মটা ঠিকমতো করবেন। এটাও ঠিক,মানুষ যখন কোনো রাষ্ট্রে বসবাস করেন, তিনি নিরপেক্ষ হতে পারেন না। কোনো না কোনো পক্ষেরপ্রতি তার সমর্থন থাকেই। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যেন অন্ধের মতো না হয়। শিল্পীরামানুষের জন্য কথা বলবেন, সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলবেন। রাজনীতির কারণে শিল্পী অন্ধহলে পথ দেখাবেন কে।

 

অভিনেত্রীরাফিয়াত রশিদ মিথিলা বলেন, ‘আমরা একটা নতুন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমন সময় আগে কখনোদেখিনি। এখন আমাদের ধৈর্যশীল হতে হবে। আমরা এখন আর কোনো বিভক্তি চাই না। কে কখন কীকথা বলেছেন, সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে আমাদের সামনের কথা ভাবতেহবে। পেছনের কথা ভাবলে এখন চলবে না।

 

অভিনেত্রীরুকাইয়া জাহান চমক বলেন, ‘শিল্পীদের রাজনৈতিক ট্যাগ থাকা উচিত নয়। তারা সব মানুষের।কিন্তু অনেকেই রাজনৈতিক ট্যাগ ব্যবহার করে সুযোগ নিয়েছেন। শিল্পীদের এমন করা উচিত নয়।এখন দ্রুত শিল্পীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা উচিত। যে কমিটি আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনরক্ষায় কাজ করবে। মূলধারার শিল্পী, যাদের কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই, তাদের নিয়েকমিটি গঠন করা উচিত।

 

এবিষয়ে নির্মাতা সৈকত নাসির ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শিল্পীদের রাজনৈতিক দর্শন, ভিন্নমত, ভিন্নআদর্শ থাকতেই পারে। এটি সবার নাগরিক অধিকার। তাই বলে দল ক্ষমতাচ্যুত হলেই তাদের ওপরআক্রমণ করতে হবে? এটা কোন সভ্য রাজনীতি? চলচ্চিত্রের অনেক শিল্পী আজ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন,যা একেবারেই কাম্য নয়। এই শিল্পীরাই আপনাদের বিনোদিত করেছেন, আপনাদের ভালোবাসায় তারাপরিচিতি পেয়েছেন। অন্তত সেসব কথা মাথায় রেখে ক্ষমা করতে শিখুন।

 

নির্মাতাকবিরুল ইসলাম রানা লিখেছেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এ দেশে শিক্ষক, ডাক্তার, পরিচালক,শিল্পী তাদেরও রাজনৈতিক পরিচয় লাগে। দলের সাপোর্ট করেন, সমস্যা নাই, শুধু দলকানা হয়েননা। এর পরিণতি সবাই দেখছি। আমরা অবশ্যই রাজনীতি করব, সাপোর্ট করব, কিন্তু তারও লিমিটেশনথাকা উচিত। সব সরকার আমাদের ব্যবহার করতে চাইবে, কিন্তু আমাদেরও বোঝা উচিত, কতটা আমরাব্যবহার হব।

 বিনোদন থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ