ভুয়া জন্মদিনপালন ও যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়াসহ পাঁচটি মানহানির মামলা খারিজ করে বিএনপির চেয়ারপারসনখালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার ঢাকারচিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পৃথক দুই বিচারক এই আদেশ দেন। খালাস পাওয়া৫ মামলার মধ্যে ৪টি মামলায় ঢাকার ৩ নম্বর অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুলহক এবং একটি মামলায় ঢাকার ৪ নম্বর অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনএ খারিজ আদেশ প্রদান করেন।
খালেদা জিয়ারপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, মামলার বাদী একাধিক ধার্য তারিখেআদালতে উপস্থিত না হওয়ায় এ খারিজ আদেশ দিয়েছেন আদালত। এা মামলাগুলোর মধ্যে ২০১৬সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলামভুয়া জন্ম দিনের মামলা দায়ের করেন। পরে ওই বছর ২৭ নভেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেগ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
মামলায় বলা হয়,বিভিন্ন মাধ্যমে খালেদা জিয়ার ৫টি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিন পাওয়াযায়নি। এ অবস্থায় তিনি ৫টি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর সাহাদাত বার্ষিকীর জাতীয় শোক দিবসে আনন্দ উৎসব করে জন্ম দিন পালন করেআসছেন। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য তিনি ওইদিন জন্মদিনপালন করেন। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের মদদের মামলাটি ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ জননেত্রীপরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী দায়ের করেন। ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও থানারওসি (তদন্ত) এবিএম মশিউর রহমান খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।ওই বছর ১২ অক্টোবর সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
মামলায় বলা হয়,১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর মুক্তিযোদ্ধামেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে সামরিক সরকারের দায়িত্বদখল করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসলে তাকে হুমকি তার বাবার বাড়িতে প্রবেশ করতে দেন নাই। এছাড়াখালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর রাজাকারদের হাতে মন্ত্রিত্বতুলে দেন। যার মাধ্যমে স্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েদেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকার মানহানি ঘটিয়েছেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুররহমান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগের মানহানির মামলাটি ২০১৭ সালের২৫ জানুয়ারি জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগেবলা হয়, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলেরপ্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াবলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা চান নাই। তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তানেরপ্রধানমন্ত্রীত্ব। জেনারেল জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ায় এদেশের জনগণ যুদ্ধেনেমেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উন্নয়নের নামে চলছে দুর্নীতি ও লুটপাট। দলীয় লোকদেরজঙ্গি বানিয়ে নিরীহ লোকজনকে হত্যা করছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগকরে লুটপাট ও হত্যা করছে। খালেদা জিয়ার উক্ত বক্তব্য মানহানিকর উল্লেখ করে এ মামলাদায়ের করা হয়।
আদালতে দাখিলকৃতপুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন দৈনিকের প্রকাশিত প্রতিবেদনএবং উক্ত অনুষ্ঠানের ধারণকৃত ভিডিও সিডি পর্যালোচনায় এবং সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনারসত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি খালেদা জিয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগ সরকারেরউন্নয়নমূলক কাজের সমালোচনা ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণকরাসহ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছেন।
মামলায় অভিযোগেরসত্যতা পাওয়ায় ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো.জাফর আলী বিশ্বাস সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধেশহীদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে মানহানিকর মন্তব্যের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদাজিয়া ও দলটির স্থায়ী কমেটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৫জানুয়ারি বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগেবলা হয়, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশন বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদীমুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, তিনিতো (বঙ্গবন্ধু) বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন।শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ‘আজকে বলা হয়, এতো শহীদ হয়েছে,এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে।’ আর প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপিরচেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মানহানি ও হত্যার হুমকির মামলার অভিযোগ ২০১৬সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায়বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পরকলঙ্কিত মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমেসামরিক সরকারের দায়িত্ব দখল করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছেন। ১৯৮১ সালের১৭ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসলে তাকে হুমকি তার বাবার বাড়িতেপ্রবেশ করতে দেন নাই। এ ছাড়া খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে স্বাধীনতাবিরোধীআলবদর রাজাকারদের হাতে মন্ত্রিত্ব তুলে দেয়। যার মাধ্যমে স্বীকৃত স্বাধীনতা বিরোধীদেরগাড়ীতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকা মানহানি ঘটিয়েছেন।