শনিবার , ০৫ অক্টোবর ২০২৪

পাঠ্যবই থেকে বাদ যাবে ‘অতিরঞ্জিত ইতিহাস’

নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের উদ্যোগ

দেশকাল ডেস্ক   মঙ্গলবার , ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানেআওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তীকালীনসরকার। পুরোনো সৃজনশীল পদ্ধতির শিক্ষাক্রমে রচিত বইগুলো আগামী বছর শিক্ষার্থীদের হাতেতুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরই মধ্যে এসব বই সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। একটি টিম এইকাজটি করছে। তারা জানিয়েছেন, যেসব বইয়ে বিশেষ করে ঐতিহাসিক ঘটনার ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিতকোনো তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, কিংবা অযাচিতভাবে কাউকে হিরো বানানোর চেষ্টা হয়েছে, পাঠ্যবইথেকে সেই অংশটুকু বাদ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেসববাণী পাঠ্যবইয়ে রয়েছে, সেগুলো মুছে দেওয়া হবে। তাকে ঘিরে কোনো অতিরঞ্জিত তথ্য বইয়েব্যবহার করা হলে সেটিও বাদ দেওয়া হবে।

 

জানা গেছে, আগামীবছর পুরোনো শিক্ষাক্রমে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান শুরু হবে। সেজন্য এরই মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমেরওপর লিখিত বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ের দরপত্র বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব শ্রেণিতেজাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২-এর আলোকে প্রণীত সংশোধিত ও পরিমার্জিত বই যাবে। যেহেতু বিগতসরকারের সময়ে এই শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে, সে কারণে পাঠ্যবইয়ে বিগত সরকারপ্রধানের বাণীএবং বিভিন্ন অতিরঞ্জিত তথ্য রয়েছে। সেজন্য প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিরপাঠ্যবইয়ে সংশোধনের কাজ চলছে।

 

এনসিটিবি সূত্রজানিয়েছে, পাঠ্যবই সংশোধনের জন্য শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একটি টিম গঠন করা হয়েছে।এই টিমে প্রতিটি বিষয়ের তিন থেকে পাঁচজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহবিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক। সবমিলিয়ে পঞ্চাশের বেশি ব্যক্তি পাঠ্যবই সংশোধনেরকাজ করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসের মধ্যেই পাঠ্যবই সংশোধনের কাজশেষ হবে।

 

গতকাল এনসিটিবিতেগিয়ে দেখা যায়, ভবনের ষষ্ঠ তলায় অডিটোরিয়াম ও গ্রন্থাগারে পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজচলছে। সেখানে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিশেষজ্ঞরা। কথা হয় পাঠ্যবই পরিমার্জন টিমের সদস্যশিক্ষা গবেষক রাখাল রাহার সঙ্গে। তিনি কালবেলাকে বলেন, পাঠ্যবই সংশোধনের কাজ চলছে।তবে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। কিছু কনটেন্টে হয়তো কিছু লেখা বাদ যেতে পারে। তবে কোনোকনটেন্ট পুরোপুরি বাদ যাবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নন বলে জানান তিনি।

 

শেখ মুজিবুর রহমানেরইতিহাস পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই জানিয়ে রাখাল রাহা বলেন, তার (শেখমুজিবুর রহমান) ইতিহাস বা তাকে ঘিরে কোনো কনটেন্ট বাদ দেওয়া হবেএমন কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। বরং সেগুলোকেরাখার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে, ইতিহাসের ক্ষেত্রে যদি অতিরঞ্জিত কিছুলেখা হয়, কাউকে হিরো বানানোর চেষ্টা করা হয়, সেটি বাদ দেওয়া হবে।

 

 

শেখ হাসিনাকেহিরো বানানোর চেষ্টা হয়েছেএমন কোনো তথ্যথাকলে তা বাদ দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ছাত্রসমাজ তার ওপর ক্ষুব্ধছিল। সে কারণে তাকে নিয়ে কোনো অতিরঞ্জিত তথ্য থাকলে সেটিও বাদ দেওয়া হবে। এ ছাড়া কাভারেতার বাণী রয়েছে, সেগুলো বাদ যাবে।

 

টিমের সদস্য ওঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, পাঠ্যবইয়ের কাভারে শেখ হাসিনারকোনো বাণী থাকবে না। এ ছাড়া অতিরঞ্জিত কোনো ইতিহাস থাকলে সেটিও বাদ দেওয়া হবে। এসবপরিবর্তন করে বই পরিমার্জনের কাজ চলছে।

 

জানতে চাইলে এনসিটিবিসদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তর থেকেএকটি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা পাঠ্যবই সংশোধনের কাজ করছে। আশা করি, ৩০ সেপ্টেম্বরেরমধ্যেই এই কাজ শেষ হবে।

 

এনসিটিবি চেয়ারম্যানঅধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, বিগত সরকারের সময়ে পাঠ্যবইয়ে যেসব বিষয়ে অতিরঞ্জিতকিছু লেখা হয়েছে, সেগুলো বাদ দেওয়া হবে। সেজন্য পরিমার্জনের কাজ চলছে। আশা করছি খুবদ্রুত এ কাজ শেষ হবে এবং বই ছাপানোর কাজ শুরু করা যাবে।

 

স্বল্প সময়েরমধ্যে বই ছাপিয়ে এক জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে কি নাজানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন,করোনাকালীন দুই মাসের মধ্যে বই ছাপিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সেজন্য আশা করছি এবারও পারব।তবে এ ক্ষেত্রে সব স্টেকহোল্ডারের সহযোগিতা প্রয়োজন।

 শিক্ষাঙ্গন থেকে আরোও সংবাদ

ই-দেশকাল

আর্কাইভ